মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

খেজুরের বীজ থেকে শাহিনের অভিনব ‘কফি’ উদ্ভাবন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫
  • ৪২ বার পড়া হয়েছে

দেশি খেজুর গাছের রসের জনপ্রিয়তার শেষ নেই। খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত জনপদ ঝিনাইদহ। তবে দেশে খেজুর রসের জনপ্রিয়তা থাকলেও দেশি খেজুরের কদর শূন্যের কোটায়। দেশি খেজুর পাকার পরে তা অবহেলায় পড়ে থাকে গাছের গোড়ায়। পাখ-পাখালির খাবার দেশি খেজুর। কিন্তু সেই খেজুর দিয়েই এবার অভিনব এক পানীয় বানিয়েছেন ঝিনাইদহের আহসান ইসলাম শাহিন। খেজুরের বীজ থেকে তৈরি এ পানীয় টেক্কা দিচ্ছে কফির সঙ্গে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের কৃষি উদ্যোক্তা আহসান ইসলাম শাহিন। শহরের আরাপপুরের বাসিন্দা হলেও তিনি এখন সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের জাড়গ্রামে বসতি গড়েছেন। যেখানে তিনি একাই বসবাস করেন। নবগঙ্গা নদীর কোলঘেঁষে ৪৩ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ছোট্ট খামারবাড়ি। সেই খামারবাড়িতে কৃষি উদ্ভাবনের নানা দিক নিয়ে তিনি নিভৃতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইলেকট্রিক ও ইলেট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা করা শাহিন একসময় ঢাকায় চাকরি করেছেন। তবে কৃষির প্রতি তার আগ্রহ ছিল আজন্ম। তাই চাকরি ছেড়ে শহরের কোলাহল ঠেলে নিভৃত পল্লিতে গড়ে তুলেছেন নিজের খামারবাড়ি। যেখানে তিনি আখ, আম, লেবু, পেয়ারা, পেঁপে, শাক-সবজি চাষ করছেন। নিজেই লাগিয়েছেন নানা প্রজাতির ওষুধি ও ফুলের গাছ। তবে শাহিনের সবচেয়ে বড় সৃষ্টি খেজুর বীজ থেকে সুপেয় পানীয়। যার স্বাদ ও সুঘ্রাণ কফিকেও হার মানায়।

আহসান ইসলাম শাহিন বলেন, ‘দেশি খেজুর কেউ খায় না। গাছের গোড়ায় পড়ে থাকে। নষ্ট হয়। এসব দেখে আমি দেশি খেজুরের বীজ দিয়ে কিছু করা যায় কি না চিন্তা করি। পরে ইউটিউবে ভিডিও দেখে জানতে পারি, মধ্যপ্রাচ্যে খেজুর বীজের কফি বা পানীয় অত্যন্ত জনপ্রিয়। এরপর আমি দেশি খেজুরের বীজ দিয়ে পানীয় তৈরির কাজ শুরু করি।’

উদ্ভাবক শাহিন বলেন, ‘খেজুরের বীজ সংগ্রহের পর খোসা ছাড়িয়ে আলাদা করা হয়। ওই বীজ ভালো করে ধুয়ে তা রোদে শুকানো হয়। এরপর সেই বীজ বালুভর্তি কড়াইয়ে মচমচে করে ভেজে নিই। ভাজা শেষ হলে বীজ থেকে বালু ও ময়লা আলাদা করে ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করা হয়। গুঁড়ো করার পরে তা রূপ নেয় কফির রঙে। পান করা যায় কফির মতো।’

স্থানীয় সামাদ আলী বলেন, ‘শাহিন চাচা সারাদিন নিজের খামারে এটা-সেটা নিয়ে কাজ করেন। গ্রামের ছেলেদের মাধ্যমে তিনি খেজুরের কাদি সংগ্রহ করেন। সেই খেজুরের খোসা ও বীজ আলাদা করেন। বীজ দিয়ে কফি বানান এবং খেজুরের মাংসল খোসা দিয়ে গুড় তৈরি করেন। দুটো খাবারই অসাধারণ।’

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শাহিনের উদ্ভাবিত খেজুর বীজের কফি খেতে প্রতিদিন মানুষ আসে দূর-দূরান্ত থেকে। কেউ কেউ আসেন কফি তৈরির কৌশল শিখতে। শাহিন অবলীলায় সবাইকে এ কফি বানানোর কলাকৌশল শিখিয়ে দেন।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর-এ-নবী বলেন, ‘কৃষি উদ্ভাবক শাহিন খেজুর বীজ থেকে যে পানীয়টি তৈরি করেছেন, তা অনেক সুস্বাদু। যদিও পানীয়টি অনেক আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে পান করার প্রচলন আছে। বাংলাদেশে প্রথম আহসান ইসলাম শাহিন দেশি খেজুরের বীজ থেকে এ কফির বিকল্প পানীয়টি তৈরি করেছেন। আমরা তার খোঁজ-খবর রাখছি। যাবতীয় সহযোগিতা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘কফিতে ক্যাফেইন থাকে। এ ক্যাফেইন দীর্ঘদিন মানবদেহে প্রবেশ করলে তা মাদকতা তৈরি করে। এ ছাড়া অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও তৈরি হয়। কিন্তু খেজুর বীজে সেই ক্ষতির ঝুঁকি নেই। এটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। খেজুর বীজ থেকে তৈরিকৃত পানীয় হজমশক্তি বাড়ায়। এটি পান করলে স্থূলতা কমে। একই সঙ্গে উদ্বিগ্নতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।’

বাংলা৭১নিউজ/এসএন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com