মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

দক্ষিণ এশিয়ার নবনিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন এবং দেশের অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার কর্মসূচির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়।

আলোচনাকালে জুট তার আগের অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন এবং সে সময় বাংলাদেশ তার হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নেয়।

তিনি বলেন, ‘আপনাকে এবং আপনার চমৎকার দলকে অভিনন্দন। আপনারা খুব ভালো কাজ করছেন,’—অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক খাতের বেশ কিছু জটিল ইস্যু মোকাবিলায় যেভাবে কাজ করছে তা উল্লেখ করে জুট বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে এই যাত্রা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। আমরা বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নে শরিক হতে চাই।’

গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে নাড়া দিয়ে যাওয়া এক আবেগঘন মুহূর্ত।’

প্রধান উপদেষ্টা তার এই সমর্থন ও প্রশংসার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন দেশটি ছিল এক বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের মতো—যেন ভূমিকম্প-পরবর্তী এলাকা। আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে সব উন্নয়ন সহযোগী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে।’

অধ্যাপক ইউনূস গত জুলাই মাসের আন্দোলনে তরুণদের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘তরুণরাই জাতিকে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণরা যে ঐতিহাসিক কাজটি করেছে, তা স্মরণীয়। বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা জুলাই নারী দিবস পালন করছি। তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ তরুণদের ঘিরে; তাদের স্বপ্নের সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনা মেলাতে হবে।’

বিশ্ব ব্যাংককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে শুধু একটি ভৌগোলিক সীমানা হিসেবে দেখলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতি তার চেয়ে অনেক বড়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি উন্নত হয়, তাহলে গোটা দক্ষিণ এশিয়া উপকৃত হবে। আমাদের নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখলে আমরা এগোতে পারব না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। আমাদের রয়েছে বিশাল সমুদ্রসীমা, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, অনেক দেশেই এখন তরুণ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা কারখানা বাংলাদেশে আনুন। আমরা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু দেব। বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তর করব।

বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নারী ক্ষমতায়ন ও অধ্যাপক ইউনূসের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাব। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশের কন্যাশিশুদের জন্য চালু হওয়া শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি আজ বহু দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’

তিনি জানান, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থায়ন করেছে এবং আগামী তিন বছরে এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

সভায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকিও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) নতুন পরিচালন ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে পরিচালনা ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। আমরা এটিকে আরও কার্যকর করতে চাই।’

তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নেট বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর পেছনে ইন্ট্রা-কম্পানি ঋণ ও শক্তিশালী ইক্যুইটি বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাংলা৭১নিউজ/এবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com