‘সকাল থেকে ভিজতেছি, কিন্তু যাত্রী নাই। মানুষ রাস্তায়ই নামতেছে না। দুইটা ভাড়া পাইছি, তাও পানি ভেঙে ভ্যানে উঠাইতে পারি না।’ — কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরা শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের ভ্যানচালক মো. আব্দুল মজিদ।
টানা বর্ষণে সাতক্ষীরায় জনজীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। শহরের একাধিক এলাকা পানিতে ডুবে রয়েছে। সড়কে নেই যানবাহন, দোকানে নেই বেচাকেনা। বহু বাসা-বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে পানি।
পানিতে দাঁড়িয়ে আব্দুল মজিদ বলেন, ‘রোজগার না থাকলে চাল-ডাল কিনমু কি দিয়া? কেউ সাহায্যও করে না, সরকারও কিচ্ছু বলে না।’
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গতরাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে কয়েকদিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিতে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫৫ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ‘ টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি জমে গেছে। আগামী এক-দুইদিন এমন আবহাওয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সরেজমিনে জানা গেছে, কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমোল্লারডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার মতো নিচু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের।
প্রবাহমান পানিতে শহরের সড়কগুলো অচল হয়ে পড়েছে। কোথাও কলাগাছের ভেলা, কোথাও ককশিটে চড়ে চলাচল করছে মানুষ।
পলাশপোল বাজারের মুদি দোকানি রফিকুল ইসলাম জানান, ‘দোকানের সামনেই হাঁটু পানি। কেউ আসতে চায় না। সকাল থেকে ৫ জনও আসে নাই। বিক্রি বন্ধ। এভাবে আর কয়দিন চলবে বুঝতে পারছি না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতি বছর একই অবস্থা হয়। পৌরসভা আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এত কষ্ট হতো না।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। প্রতিবছর বর্ষা এলেই ডুবে যায় শহর।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদাউস বলেন, ‘পৌর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে, ড্রেনের মুখগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পৌরসভার কর্মীরা ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের যে খাল রয়েছে তার কচুরিপানা পরিষ্কার করছে, যাতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সার্কিট হাউস থেকে বাইপাস পর্যন্ত একটি বড় ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাজেটের সঙ্গে সঙ্গে বাকি কাজগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে।’
জলাবদ্ধ হয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোনো সহায়তা আছে কি না জানতে চাইলে পৌর প্রশাসক বলেন, ‘ত্রাণ খাতে আমাদের পৌরসভায় তেমন কোনো বরাদ্দ থাকে না। তাই এখনই সরাসরি ত্রাণ দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভালো হবে, কারণ বরাদ্দ মূলত তারাই পান।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ