মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণ করবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারে কাজ করতে চান সৌদির নতুন রাষ্ট্রদূত বর্তমান সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে: আসিফ নজরুল দূর্নীতিতে ডুবতে বসেছে পাউবো, কোটি টাকার তেল আত্মসাত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে রাজধানীতে রিকশা র‌্যালি বিএনপি এখন চাঁদাবাজদের দলে পরিণত হয়েছে: নাহিদ ইসলাম বাহক নয়, মাদকের সঙ্গে জড়িত গডফাদারদের ধরতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ৬৪ জেলায় শুরু হচ্ছে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভের’ কাজ: সংস্কৃতি উপদেষ্টা সাংবিধানিকভাবে সমতার মর্যাদায় নারীকে অধিষ্ঠিত করা দরকার বিএনপি নেতৃত্বের চরিত্রহননের চেষ্টা হচ্ছে : ফখরুল

দূর্নীতিতে ডুবতে বসেছে পাউবো, কোটি টাকার তেল আত্মসাত

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

কুষ্টিয়ায় গড়াই নদ খনন প্রকল্পে ড্রেজারের কোটি টাকার তেল আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

শুধু তেলের টাকা আত্মসাতই নয়, গড়াই নদী খনন থেকে শুরু করে এখানকার ইমারজেন্সি কাজ, খাল খনন, জিকে প্রকল্পসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও দূর্নীতির মহাউৎসব চলেছে। এসব ব্যপারে খাতওয়ারি তদন্ত করলে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে।

অভিযোগ ও অভিযান

কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের  ড্রেজার বিভাগ গড়াই নদ খনন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সেটি চালু দেখিয়ে কোটি টাকার তেল আত্মসাৎ করা হয়েছে। তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের যোগসাজশে এই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি দল কুষ্টিয়ায় পাউবোর ড্রেজার বিভাগে অভিযান পরিচালনা করে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল।

দুদক অভিযানের ফলফল

  দুদক প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে বিল ভাউচার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গরমিল পাওয়া গেছে। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে যে,  ড্রেজার বন্ধ থাকলেও সেটি চালু দেখিয়ে তেলের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এটি করা হয়েছে-  তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশের মাধ্যমে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

দুদক সকল আলামত সংগ্রহ করেছে এবং তা আরও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

নির্বাহী প্রকৌশলীর সংশ্লিষ্টতা

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী  সৈকত বিশ্বাসের এই দূর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে।  গড়াই ড্রেজারের তেল আত্মসাতের ঘটনায় তিনি সরাসরি অভিযুক্ত। কারণ,  দুদক অভিযান চালিয়ে বিল ভাউচার পরীক্ষা করে গরমিল পেয়েছে। ড্রেজার বন্ধ থাকা সত্ত্বেও তেলের টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে, যা সৈকত বিশ্বাসের অধীনস্থ বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এছাড়াও এই ঘটনায় তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বিশ্বাসের যোগসাজশ ছিল বলে দুদক প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

সৈকতের বক্তব্য

অভিযানকালে এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী  সৈকত বিশ্বাসের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরং দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। যা তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।

মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের মালিকের বক্তব্য

মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের মালিক আক্তার মণ্ডল এই বিষয়ে তার বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমাকে যেখানে তেল পৌঁছে দিতে বলা হয় আমি শুধু সেখানে নামিয়ে দেই। এটাই আমার কাজ। এর বাইরে কি হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।” তিনি তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা তেলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে তার কাজ কেবল নির্দেশিত স্থানে তেল সরবরাহ করা।

দুদক কর্মকর্তার বক্তব্য

গড়াই ড্রেজারের তেল আত্মসাতের ঘটনায় দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার বিভাগের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তিনি আরও জানান, ড্রেজার বন্ধ থাকলেও সেটি চালু দেখিয়ে কোটি টাকার তেল আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সব বিল ভাউচার এবং নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি এবং সেগুলোতে গরমিল পাওয়া গেছে। দুদক কর্মকর্তা উল্লেখ করেন যে, এই দুর্নীতির সাথে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের যোগসাজশ ছিল।

 নীল কমল পাল নিশ্চিত করেছেন যে, সকল আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকল্পের পটভূমি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (চতুর্থ পর্যায়) আওতায় ১৪ কিলোমিটার নদীপথ খননের কাজ বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর আগেও গড়াই নদ খনন নিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯৭ সালে পরীক্ষামূলক খনন শুরু হলেও এবং পরবর্তীতে ৯৪২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদের নাব্যতা ফেরানো সম্ভব হয়নি, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও সুন্দরবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com