ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামে এক মর্মান্তিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে দেশটির ক্রীড়াঙ্গন। মেয়ের উপার্জনে বসে বসে খায় বাবা! প্রতিবেশীদের এমন কটাক্ষ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে গুলি করে হত্যা করলেন বাবা।
এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে উদীয়মান টেনিস তারকা রাধিকা যাদব হত্যাকাণ্ডে। রাধিকা একটি টেনিস একাডেমি চালাতেন। সেই একাডেমি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাধিকার বাবা দীপক।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) হাড়হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, রাধিকাকে লক্ষ্য করে পাঁচটি গুলি চালান দীপক। তিনটি গুলি রাধিকার বুকে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় তার। তরুণ খেলোয়াড়ের মর্মান্তিক পরিণতির পর গোটা ঘটনা নিয়ে ভারতজুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পর নিহতের বাবা দীপক যাদবকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,জেরার মুখে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন বাবা দীপক। তিনি অকপটে জানান, “গ্রামের সবাই আমাকে খোঁচা দিত। সবাই বলত, আমি মেয়ের পয়সায় বসে বসে খাই। এই খোঁচা শুনতে শুনতে বিরক্ত লাগত। আমার মেয়ের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলত। আমি অনেকবার মেয়েকে বলেছিলাম একাডেমিটা বন্ধ করে দিতে, শোনেনি। বারবার কটাক্ষ শুনতে শুনতে আমার সম্মানহানি হচ্ছিল।”
দীপক জানান, রাগের বশেই রান্নাঘরে গিয়ে মেয়েকে গুলি করে দেন তিনি। নিজের লাইসেন্সড রিভলভার থেকেই গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেন তিনি। তবে মেয়ের এমন মর্মান্তিক পরিণতির পরেও পুলিশকে বয়ান দিতে চাননি রাধিকার মা।
কাল হয়ে দাঁড়াল রিলস ভিডিও?
উঠতি টেনিস তারকা সম্প্রতি ইনজুরির কারণে কোচিংয়ের দিকে ঝুঁকছিলেন। একটি একাডেমি চালানোর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য রিলস ভিডিও বানাতেন। যা নিয়েও বাবা মেয়ের মধ্যে ঝামেলা হতো। সম্প্রতি এমন একটি রিলস ভিডিও দেখে ক্ষুব্ধ হন তার বাবা। এরপরেই নিজের লাইসেন্সড বন্দুক বের করে পরপর গুলি চালান বলেও ভারতের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। রাধিকাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও, তার আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
গুরুগ্রাম পুলিশ স্টেশনের পাবলিক রিলেশন্স অফিসার সন্দীপ কুমরা জানান, ‘(মৃতের) বাবা উত্তেজিত হয়ে গিয়ে গুলি চালান। যে বন্দুকটি দিয়ে গুলি করা হয়, তার লাইসেন্স রয়েছে এবং সেটি বাড়ি থেকে উদ্ধারও করা হয়েছে।’ পুলিশ এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে পরিবার, পরিজন ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
রাধিকার সাবেক কোচ মনোজ ভরদ্বাজ জানান, তার ছাত্রীর মৃত্যুটা বিরাট ক্ষতি। তার মতে, তার ছাত্রী প্রতিভাবান, লক্ষ্যে অবিচল এবং নিয়ম মেনে চলা একজন অ্যাথলিট ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের ডাবলসের ক্রমতালিকায় ১১৩ এবং সিঙ্গেলসের ক্রমতালিকায়ও ২০০-র মধ্যে ছিলেন। হরিয়ানার টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে তার ব়্যাঙ্কিং ছিল পাঁচ। তবে উঠতি এই টেনিস তারকা নিয়মিত সোশ্য়াল মিডিয়া রিল তৈরি করতেন, যা তার বাবার একেবারেই অপছন্দ ছিল। শেষমেশ চরমে পৌঁছায় ঝামেলা এবং দীপক গুলিই চালিয়ে দেন। বর্তমানে রাধিকার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি