তেহরানের পরমাণু প্রকল্পকে অজুহাত হিসেবে ধরে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে সামরিক হামলা চালায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সব মার্কিন ঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ এ হুমকি দিয়েছেন।
বুধবার রাজধানী তেহরানে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে আজিজ নাসেরজাদেহ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চায়, তাহলে আমাদের চেয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে। মধ্যপ্রাচ্যে যতগুলো মার্কিন সেনাঘাঁটি রয়েছে, সবগুলোতে বিনা দ্বিধায় একযোগে হামলা চালানো হবে। ওই ঘাঁটিগুলো আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে।”
নাসিরজাদেহ বলেন, গত কয়েক বছরে ইরান তার সামরিক সক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে এবং সামরিক বাহিনীর অপারেশনাল ফোর্স সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য পুরোপুরি অস্ত্রসজ্জিত।
গত মঙ্গলবার মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেন দেশটির সামরিক বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ডার জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা। সেখানে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন-তেহরানের সংলাপ যদি ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে ইরানকে পরমাণু প্রকল্প থেকে বিরত রাখতে ‘বিভিন্ন বিকল্প’ মজুত রয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে।
তার এই বক্তব্যের পরেই বুধবার প্রতিক্রিয়া জানান ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে গত বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাপক অস্বস্তিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ওয়াশিংটনের অভিযোগ— ইরানের পরমাণু প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য পারমাণবিক বোমা বানানো। দেশটিকে এই কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ‘জ্যাকোপা’ নামে একটি চুক্তি করেছিলেন। তবে তার উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে তার প্রথম শাসন মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন।
ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে যায় এবং ইরানও তার পরমাণু প্রকল্পে মনোনিবেশ করে। গত কয়েক বছরে পারমাণবিক বোমার প্রধান উপকরণ ইউরেনিয়ামের মজুতও সমৃদ্ধ করেছে দেশটি। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরমাণু শক্তির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) জানিয়েছিল, ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করছে। যদি এই ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়, সেক্ষেত্রে অনায়াসে এই ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে অন্তত ৬টি পরমাণু বোমা বানানো সম্ভব।
আইআইএ-এর এই তথ্যে পর সচেতন হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। ট্রাম্প নিজে ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি দেন। ইরানের সরকারও তাতে সাড়া দেয়। ইরানের চাওয়া অনুযায়ী ওমানের মধ্যস্থতায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংলাপ শুরু হয়েছে ইরানের, যা এখনও চলছে।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ