ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) হত্যার ঘটনায় ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটি। তবে এ দাবির সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য। এ ঘটনার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রদল।
তবে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভিন্ন মতামত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, সাম্যের হত্যাকাণ্ড সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটে, যা গণপূর্ত বিভাগের অধীনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যানের গেট বন্ধ করার চেষ্টা করলেও বাম ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী এবং উদ্যানের মাদক কারবারিরা সেই গেট খুলে দেয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে, ক্যাম্পাসের বাইরের এলাকায় হত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করা অযৌক্তিক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ ৫ আগস্টের পর একাধিকবার চিঠি দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট গেটগুলো বন্ধ করার আহ্বান জানান। তবে কোনো অজানা কারণে গণপূর্ত বিভাগ সেই নির্দেশনা অমান্য করেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিচালনায় অব্যবস্থাপনার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে দায়ী করে এবং উদ্যানের সঙ্গে সংযুক্ত ঢাবির সকল গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাবির ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, লাশের রাজনীতি করে ভিসি স্যারকে সরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি দল। যারা প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেনি, তারাই এখন ভিসি স্যারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি কি খুনি? নাকি তাকে খুনি বানিয়ে রাজনীতির ফায়দা লুটতে চায় কেউ?
তিনি বলেন, একজন ভিসি হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য যে-সব সাহসী ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছেন, তার কোনো তুলনা নেই।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে ভিসি স্যার বারবার পদক্ষেপ নিয়েছেন। ব্যারিকেড দিয়ে এবং উদ্যানের গেটে তালা দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। তখন যারা সুশীল সেজে এই নিরাপত্তাব্যবস্থার সমালোচনা করেছিল, এখন তারাই কেন খুনির বিচারের দাবি করছে না? সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসি স্যারের পদত্যাগ চান না; তারা নিরাপদ ক্যাম্পাস চান। যারা পদত্যাগের দাবি করছে, তারাই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
ঢাবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, সাম্য ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটেছে, যা ভিসি বা প্রক্টরের আওতাধীন নয়। এর দায়ভার তাদের ওপর বর্তায় না।
দীর্ঘদিন ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধ করার চেষ্টা করা হলেও নানা মহলের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এমনকি ক্যাম্পাসকে বহিরাগতদের জন্য নিষিদ্ধ করলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন চাপের মুখে তা খুলে দিতে হয়।
তিনি বলেন, আমরা চাই ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হোক, নিরাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি এবং আলোর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক।
ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাম্য এবং তিনি স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস