ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের মকরমপট্টি গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কুদ্দুস মোল্লা (৫৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন।
রবিবার (৪ মে) রাতে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। সংঘর্ষে কয়েকটি বাড়িঘরও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। নিহত কুদ্দুস মোল্লা মকরমপট্টি গ্রামের বাসিন্দা এবং মৃত হামেদ মোল্লার ছেলে। তিনি বজলু মুন্সীর নেতৃত্বাধীন পক্ষের লোক ছিলেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঘারুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মকরমপট্টি গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে দবির মাতব্বর (৬৫) এবং বজলু মুন্সী (৬০) নামের দুই ব্যক্তির মধ্যে আধিপত্য বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক ইউপি সদস্য মেরাজ মুন্সী (৬৫) আগে বজলু মুন্সীর পক্ষের লোক হলেও সম্প্রতি তিনি দবির মাতব্বরের পক্ষে যোগ দেন। সোমবার (৫ মে) মেরাজ মুন্সী নিজ বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পক্ষের লোকজনকে আপ্যায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
রবিবার (৪ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুই পক্ষের শতাধিক সমর্থক ঢাল, সড়কি, রামদা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে এই সহিংসতা। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে কুদ্দুস মোল্লাকে রাত ১০টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গলায় সড়কির কোপের গভীর চিহ্ন ছিল।
নিহতের ছোট ভাই ফেরদৌস মোল্লা (৫১) বলেন, আমার ভাইকে সামনে পেয়ে দবির মাতব্বর ও তার লোকজন তাকে খুন করার উদ্দেশে তার গলায় সড়কি দিয়ে কোপ দেয়।
ঘটনার পর থেকে মেরাজ মুন্সী ও দবির মাতব্বর পলাতক রয়েছেন এবং তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপর পক্ষের নেতা বজলু মুন্সী বলেন, আমি এই হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করছি। এদিকে, মকরমপট্টি গ্রামের কিছু বাসিন্দা জানান, দবির মাতব্বরের পক্ষের আহতরা ভয়ে হাসপাতালমুখী হননি।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সহকারী আক্তার হোসেন জানান, রবিবার রাত ১১টা পর্যন্ত ২৩ জন আহত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের শরীরে কোপ ও ইটের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. তানসিভ জুবায়ের বলেন, আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিহত কুদ্দুস মোল্লার গলায় কোপের গভীর চিহ্ন ছিল।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আধিপত্য বিরোধ থেকেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। রাতেই পুলিশ, ডিবি ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এখনও মামলা দায়ের হয়নি, তবে প্রস্তুতি চলছে। এলাকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে।
বাংলা৭১নিউজ/একে