চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের জট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ১৫ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) রপ্তানি কনটেইনার রয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণত ডিপোতে প্রতিদিন রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার থাকে ৭ থেকে ৮ হাজার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় বেড়ে যাওয়া এবং বেশ কিছুদিন ধরে রপ্তানি পণ্যের চাপের কারণে কনটেইনারের এই জট তৈরি হয়েছে। জাহাজীকরণের অপেক্ষায় ডিপোগুলোতে পড়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ পণ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে ২১টি বেসরকারি ডিপো রয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের শতভাগ বেসরকারি ডিপোর ব্যবস্থাপনায় জাহাজে তোলা হয়।
সাধারণত কারখানা মালিকরা রপ্তানি পণ্য ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানযোগে ডিপোগুলোতে এনে রাখেন। এরপর সেখানে কনটেইনারবোঝাই (স্টাফিং) ও শুল্কায়নসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে ট্রেইলারে তুলে জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন( বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, গত জুলাইয়ে ডিপোগুলোতে অন্যান্য মাসের চেয়ে রপ্তানি পণ্যের চাপ বেশি ছিল। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৬০-৬৫ হাজার টিইইউএস রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়, সেখানে জুলাইয়ে হয়েছে ৮১ হাজার। চলতি আগস্টেও সেই চাপ অব্যাহত আছে।
গত বুধবার রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা কনটেইনার ছিল ১৫ হাজার টিইইউএস। তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। একটি জাহাজ জেটিতে বার্থিং পেয়ে আমদানি কনটেইনার খালাস করতে কয়েক দিন সময় লাগছে। এরপর রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে সেই জাহাজ বন্দর ছাড়ছে। এভাবে পণ্য জাহাজীকরণে সময় ব্যয় হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। এ সময় কনটেইনারগুলো ডিপোতেই পড়ে থাকছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মার্কিন প্রশাসন গত ৮ জুলাই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ বাড়তে থাকে।
অধিক শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা দ্রুত পণ্য শিপমেন্টের জন্য বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ দেন। এ কারণে রপ্তানিকারকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্য পাঠাতে শুরু করেন।
জানা গেছে, পণ্যজটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই এ শিল্পের। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ডিপোর বাইরে পণ্য নিয়ে শত শত ট্রাক অপেক্ষা করছে।
ডিপোতে নামিয়ে রাখার জায়গা নেই। কয়েকগুণ বেশি ট্রাকভাড়া গুনতে হচ্ছে। ডিপোর ভিতরেও প্রচুর রপ্তানি পণ্য পড়ে রয়েছে। যথাসময়ে জাহাজে তুলতে না পারলে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
বিদেশি ক্রেতাদের মনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে আপাতত বন্দরে রপ্তানির গতি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ডিপোতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য স্টাফিং করতে হবে। বাড়াতে হবে ডিপোর সক্ষমতা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস