ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গোপন পরিকল্পনা, ৫ সাংবাদিককে টার্গেট
ফেনী প্রতিনিধি:
-
আপডেট সময়
শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫
-
৪৫
বার পড়া হয়েছে
গাজীপুরের মতো ফেনীতে ৫ সাংবাদিকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শনিবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে বাসস ফেনী সংবাদদাতা ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।পুলিশ সূত্র জানায়, ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি ছাত্রলীগ-যুবলীগের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফেনীর ৫ সাংবাদিককে টার্গেট করার পরিকল্পনার করা হয়েছে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ছাড়াও যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আরিফুর রহমান, দৈনিক ফেনীর সময়ের প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজম, এখন টিভি প্রতিনিধি সোলায়মান হাজারী ডালিম ও এনটিভি অনলাইন রিপোর্টার জাহিদুল আলম রাজন রয়েছেন।
সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, ৮ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানিতে পারি, ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কতিপয় ব্যক্তি কয়েকজন সাংবাদিককের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছে। ওই গ্রুপে জনৈক সাইফ উদ্দিন লিখেছেন, “আমাদের উচিত গাজীপুরের মতো মিডিয়ার ট্রায়ালটার চান্স নেওয়া। এই চান্সে আমাদের ফেনীর সময়ের শাহাদাত, আরিফ আজম, আরিফ, রাজন এদের যে কারোর বিরুদ্ধে চান্সটা নেওয়া দরকার। এখন বিএসএল নিয়ে আসবে না, সব বিএনপির ওপর যাবে।
সাহেদ অভি নামে অপর একজন লিখেছেন, “এই আরিফ আজম ও শাহাদাত হোসেনদের পা চাটতো আমাদের নেতারা। এই আরিফ আজম আমাদের ফেনী কলেজ সামনে নোবেলদের মিছিল ছবি প্রকাশ করেছে। সবাইকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে….। তার ও সম্পাদক শাহাদাতের ১০ বছর পরে হলেও ছাড় নেই।
মাটির যতো নিচে থাকুক তুলে নিয়ে আসবো, তার সাথে এনটিভির রাজন, যমুনা টিভির আরিফ এদের সবকয়টিকে দেখবো…।”নিষিদ্ধ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, ফেনী সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার, ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সরোয়ার রনি, ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহাম্মদ অপু, ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর করিম জাবেদ, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি রায়হান হাবিব শাকিল, শওকত কিরন ও মো. হাসান, ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী নিজাম উদ্দিন শুভ, ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপুসহ আরো ২০/২৫ জন এই গ্রুপে আলোচনা করেছে। এই গ্রুপে এডমিন হলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহাম্মদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ, সহ-সভাপতি সাহেদ আকবর অভি, আশিক হায়দার রাজন হাজারী, রনি চন্দ্র দাস, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার, কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক।
এই গ্রুপে অন্যান্যদের মধ্যে শওকত কিরণ, জিমান শুভ, এ এইচ তুষার, জোবায়েদ আকাশ, তৌফিক চৌধুরী, হৃদয় ভূঁঞা, আকাশ আহাম্মেদ, মো. রাকিব, দিলারা সুলতানা মিলা, নিজাম পাটোয়ারী, নাছির উদ্দিন মিয়াজী, ইকবাল হোসেন বাবলু, লিও চৌধুরী, মো: রোমান, রবিউল হক ভূঁঞা রবিন, এখলাছ উদ্দিন খন্দকার, রাকিব অর্ণব, ইয়াছিন আরাফাত রাজু, রায়হান হাবিব খাঁন শাকিল, রাকিব আহাম্মদ তাহান, মামুন আড্ডা, মো: রিয়াদ হোসেন রিয়াদের নাম জানা গেছে।ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তারা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগেই জেনেছেন।
উল্লেখিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যসমূহ সাইবার সেলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যারা যুক্ত রয়েছে তাদের প্রায় সবাই ফেনীতে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি।
ফেনীর প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহীম বলেন, হামলার পরিকল্পনা ফাঁসের পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ফেনী জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফেনীর গণহত্যায় জড়িতরা পলাতক অবস্থায় থেকে নানারকম নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার এ ভয়াবহ পরিকল্পনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।ফেনীর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। সেক্ষেত্রে সাংবাদিক যা দেখবে তা লিখনির মাধ্যমে জাতিকে জানাবে। যদি তাদেরকে টার্গেট করে হুমকি-ধামকি প্রধান করা হয় তা গণমাধ্যম ও এ পেশার লোকজনের পেশাধারীত্বের ওপর হুমকি বলে মনে করি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ
শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর