শরীয়তপুরের ডামুড্যায় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাশকতার চেষ্টা চালানোর অভিযোগে আফতাব উদ্দিন ওরফে আবির (১৯) নামে এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একটি বসতবাড়ি থেকে বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
তবে শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ছিলেন পুলিশের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি ছিল, সন্দেহভাজন হিসেবে ওই তরুণকে আটক করা হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আফতাব উদ্দিন ওরফে আবির নামের ওই তরুণ ডামুড্যা পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের বিশাকুড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে মা নুরজাহান বেগমের সঙ্গে বসবাস করতেন। তার বাবা আব্দুল মালেক হাওলাদার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন এবং তিনি কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। আবির চলতি বছর পূর্ব ডামুড্যা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
ডামুড্যা থানা সূত্রে জানা যায়, আফতাব উদ্দিন আবিরের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে শনিবার বিকেলে বাড়ির সামনের সড়ক থেকে আটক করা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার বাসায় বোমা তৈরির উপকরণ রয়েছে বলে স্বীকার করেন। পরে সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল ডামুড্যায় আসে। তারা মধ্যরাত পর্যন্ত আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় পরেরদিন রোববার ডামুড্যা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন বাদী হয়ে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আফতাব উদ্দিনকে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার শরীয়তপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হলে আদালতের বিচারকের কাছে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ বলছে, আফতাব উদ্দিন আবির অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত থেকে স্বেচ্ছায় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ভিডিও দেখেও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। পরে সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং নাশকতার আগেই তাকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
তবে ঘটনার পরদিন রোববার সকালে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি জানান, ‘আমরা একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছি। গোলাবারুদ উদ্ধারের বিষয়টি ফেইক। আমরা বিষয়টি দেখতেছি। আমরা অনুসন্ধান করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। কিন্তু সেরকমের গোলাবারুদ বা বোমা-টোমা বিষয়টি সত্য নয়।’
অপরদিকে সোমবার রাতে ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ওই ছেলেকে শনিবার বিকেলে আটক করি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আমরা তার বাড়িতে অভিযান চালাই। সেখান থেকে বোমা তৈরির অনেক আলামত পাওয়া গিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে সে কী বলেছে তা তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না।’
এই ঘটনায় সোমবার রাতে জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সে সেলফ মটিভেটেড হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। সে নাশকতা করবে এমন চেষ্টা করছিল। তার আগেই আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। তবে আইএস এর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ আছে কি না তা নিশ্চিত হতে পারিনি। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে অনলাইনে ভিডিও দেখে আইএসএ মোটিভেটেট হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ