বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন

‘এভাবে চলতে থাকলে খালে পরিণত হবে তিস্তা’

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

বর্ষায় অতিরিক্ত পলি আসায় খরায় প্রায় পানিশূন্য তিস্তা। প্রতিবছর জেগে ওঠে নতুন নতুন চর। ফলে রূপ হারিয়েছে একসময়ের প্রমত্তা এই নদী। এতে প্রভাব পড়ছে তিস্তাপাড়ের জীববৈচিত্র্যে। পানিশূন্যতায় ব্যাহত হচ্ছে তিস্তার পাড় ও তিস্তার দুই তীরের চাষাবাদ।

ভারতের উত্তর সিকিম থেকে উৎপত্তি হওয়া তিস্তা বাংলাদেশের নীলফামারী হয়ে চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মোট ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে বাংলাদেশ অংশে।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৯৮ সালের দিকে প্রতিবেশী ভারত তাদের অংশে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রত্যাহার শুরু করে। এরপর থেকে তিস্তার পানিতে সমান অধিকার থাকলেও পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি তিস্তার বন্যার পানির সঙ্গে অধিক পলি আসায় তিস্তার গর্ভ ভরে উঠেছে। বর্তমানে প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হরিণচওড়া এলাকার কৃষক মশিয়ার রহমান বলেন, ‘তিস্তার পার্শ্ববর্তী জমিতে একসময় প্রচুর ফসল হতো। আগে তিস্তা নদীতে সারা বছরই পানি প্রবাহিত হতো। কিন্তু আজকাল শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না। আর যতটুকু পানি আছে তা একেবারে কম। সেই পানিতে মাছও নেই।’

জেলার আদিতমারী উপজেলার চর গোবর্ধন এলাকার কৃষক ফজল মিয়া বলেন, ‘তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ না থাকায় তাদেরকে মেশিনের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ সেচের পানি ব্যবহার করতে হয়, তাই কৃষিকাজ কম লাভজনক হয়ে উঠেছে। যদি নদীতে সারা বছর পানিপ্রবাহ থাকত, তাহলে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষদের আর দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে হতো না।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি পাকার মাথার বাসিন্দা রজমান ঘাঁটিয়াল বলেন, ‘বন্যার সময় ২-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি আর পানি থাকে। নৌকা চালাতে হয়। আর এখন হেঁটে পার হওয়া যায় নদী। শুধুমাত্র মালামাল যাতে না ভিজে সেজন্য নৌকা ব্যবহার করে কৃষকসহ অন্যান্যরা। তাই আয় কমেছে আমার। এভাবে চলতে থাকলে তিস্তা একটি খালে পরিণত হবে।’

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সভাপতি শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, বর্ষাকালে তিস্তা কমপক্ষে ২-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৫০-৬০ মিটার প্রশস্ত হয়ে এসেছে, যেখানে মাত্র হাঁটু পর্যন্ত পানি রয়েছে।

তিস্তাপাড়ের মানুষদের কষ্ট বর্ণনা করে তিনি বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষ কিভবে বালুর ওপর দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে পারে, তা ভাবলে খুবই কষ্ট হয়। তারা বালুচর পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে বাধ্য হন কারণ তাদেরকে মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষ এক সময় আনন্দে দিন কাটাতো। তিস্তা নদী ছিল আমাদের মায়ের মতো, সেই তিস্তা নদী এখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী এখন ধু-ধু বালুচর।

তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে রাখে, আর বর্ষা মৌসুমে বিনা কারণে পানি ছেড়ে দেয়। এর ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। লাখ লাখ পরিবারের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যায়, বাড়ি-ঘর নদীভাঙনের কবলে পড়ে। তিস্তা এখন আমাদের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, নভেম্বরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানির স্তর তীব্রভাবে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তিস্তার সবগুলো শাখা নদী উদ্বেগজনক হারে শুকিয়ে গেছে। তিস্তার বুকে এরইমধ্যে অনেক নতুন নতুন চর জেগে উঠেছে।

এতে তিস্তা পাড়ের জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সরকার কাজ শুরু করেছে। তিস্তা নদী রক্ষা হলে রক্ষা হবে তিস্তাপাড়ের কয়েক কোটি মানুষ, কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। কর্মসংস্থান বাড়বে তিস্তাপাড়ের মানুষের।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com