বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
আওয়ামী লীগ নিয়ে খবর প্রকাশ বা সোশাল মিডিয়ায় লেখাও কি নিষেধ? প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি দিলো চবি প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন টেকসই হবে না : রিজওয়ানা হাসান চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা শূন্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার ‘আমরা দুঃখিত সাম্য, তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি’ শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে চান ট্রাম্প পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে যমুনা অভিমুখে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত আছে : খাদ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির হৃৎস্পন্দন: প্রধান উপদেষ্টা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত আরও ৫১

আওয়ামী লীগ নিয়ে খবর প্রকাশ বা সোশাল মিডিয়ায় লেখাও কি নিষেধ?

বাংলা 71 নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বতী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করার পর দলটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যম বা গণমাধ্যমে কতটা লেখা বা বলা যাবে এনিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সোমবার প্রকাশিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গণহত্যায় অভিযুক্ত দলটির নেতাকর্মীদের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যে কোনো ধরনের “প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো”।

এ ঘোষণার পর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে সরকার নিজেই সেটি ক্ষুণ্ন করতে যাচ্ছে কি-না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন “অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা মুক্তমতের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে না”।

তবে আইনজীবীরা বলছেন, যে আইনের ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেটির পরিধি বিস্তৃত এবং কিছু বিষয় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা নেই। ফলে আইনটির অপব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

“এমনকি, সরকারের পক্ষ থেকে এই যে যৌক্তিক ও গঠনমূলক বিশ্লেষণের কথা বলা হচ্ছে; কে ঠিক করবে কোনটা যৌক্তিক বা গঠনমূলক, আর কোনটা যৌক্তিক নয়?,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন।

মত বা সংবাদ প্রকাশে বাধা কোথায়?

গত আটই মে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীদের নতুন দল এনসিপি। ছাত্রশিবিরসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সেখানে অংশ নেয়।

প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবনের সামনে টানা অবস্থান এবং পরে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে তারা। এরপর শনিবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানায় উপদেষ্টা পরিষদ। ওই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

একটি আইন ও একটি অধ্যাদেশের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

“সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা” হয়েছে বলে জানানো হয়।

এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ নিয়ে সাইবার পরিসর ও গণমাধ্যমে কোনো খবর বা মতামত প্রকাশ করা যাবে কি-না, সে ব্যাপারে জনমনে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়।

কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞার ফলে আওয়ামী লীগ কার্যত দল হিসেবেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।

“এক্ষেত্রে সংবাদ বা মতামত প্রকাশে কোনো বাধা নেই। তবে নিষিদ্ধ সত্তা তথা আওয়ামী লীগের পক্ষে বা সমর্থনে কিছু প্রকাশ করা যাবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস বিরোধী আইনটি করা হয়েছিলো ২০০৯ সালে। এতে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তার যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার’ বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে সরকার।

এই আইনের আওতায় প্রজ্ঞাপন জারি করে কোনো দলকে নিষিদ্ধ করা হলে তখন কী কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, সেটি বলা হয়েছে আইনটির ২০ নম্বর ধারায়।

ওই ধারাটির ‘ঙ’ উপধারায় বলা হয়েছে, “নিষিদ্ধ সত্তা কর্তৃক বা উহার পক্ষে বা সমর্থনে যে কোনো প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা, মুদ্রণ বা প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা প্রদান নিষিদ্ধ করিবে।”

ধারাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিবিসি বাংলাকে সুপ্রিম কোর্টের আরেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, “এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ওই নিষিদ্ধ সত্তার সদস্য বা অংশ না হয়েও যদি তাদের নিয়ে কোনো বক্তব্য দেন এবং যদি ধরে নেওয়া হয় বক্তব্যটা পক্ষে বা সমর্থনে গেছে, সেটা তখন এই আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হতে পারে।”

“উদ্বেগটা সেখানেই। কারণ ঠিক কোন বক্তব্যে বা কার্মকাণ্ডে আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে সেটা কে ঠিক করবে? সেটার মাপকাঠিই-বা কী হবে?,” বলেন সারা হোসেন।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি ব্যবহার করে আগেও দল ও সংগঠন নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে আইন পাস হওয়ার বছরেই ২২শে অক্টোবর হিযবুত তাহ্‌রীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকেও একই আইনে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এছাড়া গত বছর শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে সেই সময় পহেলা অগাস্ট সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ১৮ নম্বর ধারার ক্ষমতাবলে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

একই ধারায় এবার আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ও সন্ত্রাসী কার্যে জড়িত হিসাবে তালিকাভূক্ত করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। এক্ষেত্রে সেজন্য অবশ্য আইন সংশোধন করতে হয়েছে।

এর আগে আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল না।

প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেখানে শুরুতেই গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের ‘নেতিবাচক কার্যক্রমের’ পাশাপাশি জুলাই-অগাস্টের ‘গণহত্যায়’ দলটির ভূমিকার কথা বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশী ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন দেয়ার পর প্রধান প্রসিকিউটর জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘ম্যাস কিলিং’ বা ‘নির্বিচারে হত্যা’র অভিযোগ আনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও দেশের ফৌজদারি আদালতে এখন বিচারকাজ চলছে।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বিচারকাজে বাধা তৈরি করতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা, রাষ্ট্র ও আইন বিরোধী নানান তৎপরতা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এমন প্রেক্ষিতে সরকার মনে করে যে, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা দরকার।

“সেহেতু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো,” প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ নিয়ে সরকার যা বলেছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার পর বিষয়টি নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি সামনে আসায় ওই দিনই প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

সোমবার মধ্যরাতে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত ১২ই মে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয় বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।

“উক্ত আইন ও প্রজ্ঞাপন অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ (এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন) কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী ও সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য হবে,” বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, “তবে উক্ত প্রজ্ঞাপন অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা মুক্তমতের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে না। আওয়ামী লীগ, এর কোনো কর্মকাণ্ড, দলটি সম্পর্কে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের যৌক্তিক, গঠনমূলক বা আইনানুগ বিশ্লেষণ বা মতামত প্রদান এই প্রজ্ঞাপন দ্বারা খর্বিত করা হয়নি।”

কী ধরনের বক্তব্য প্রকাশ করা যাবে?

ঠিক কী ধরনের বক্তব্য প্রকাশ করা যাবে অথবা কোন ধরনের বক্তব্য প্রকাশিত হলে সেটি নিষিদ্ধ সত্তার পক্ষে বা সমর্থনে গেছে বলে বিবেচনা করা হবে, আইনে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য ও মতামত তো বটেই, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরেও আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে জানাচ্ছেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের এই নির্বাহী পরিচালক।

“এখন যদি ষাটের দশকের বা একাত্তরের আওয়ামী লীগের ইতিবাচক ভূমিকা ও ইতিহাস নিয়ে যদি গণমাধ্যমে বা অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য বা বিবৃতি, লেখা বা যে কোনো প্রচারণা প্রকাশ করা হয়- সেটাও কি এর মধ্যে পড়ে যাবে কি-না এগুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন,” বলেন আইনজীবী সারা হোসেন।

আইনের এমন অস্পষ্টটার কারণে অপপ্রয়োগের ঝুঁকিও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

“আওয়ামী লীগ আমলে যেমন ডিএসএ-তে (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) বলা হয়েছিল যে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো নেতিবাচক বক্তব্য বা বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না। কিন্তু কোন কথা বিদ্বেষমূলক সেটা স্পষ্ট করা হয়নি, পুলিশের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল,” বলছিলেন মিজ হোসেন।

“ফলে এর অপব্যবহার বা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করতে আমরা দেখেছি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কথাবার্তা বললেও বলতে শোনা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এটাই বড় উদ্বেগের জায়গা,” বলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।

আইনজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ সত্ত্বাকে সমর্থন করে কোনো বক্তব্য দিলে বা প্রচারণা চালালে একজন ব্যক্তির সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সাজা এবং আর্থিক জরিমানা হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com