বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বিগত দেড় দশক যে দলটি দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ চালিয়েছিল বাংলাদেশের জনগণ তাদের অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। দেশের জনগণ দুটি বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত– এক, বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে। দুই, গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক শক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, এই দুই বিষয়ে জনগণ আর কোনো আপস মানতে রাজি নয়। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি এটি উপলব্ধি করি। বিএনপিসহ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
তিনি আরও বলেন, যারা বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, অবৈধ সংসদ বা সরকার গঠন করেছে এবং যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের জনগণ, সরকার এবং রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম, খুন ও অপহরণ, দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা প্রচারকারী, বরবর বন্দিশালা আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা, পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি শুরু থেকে জনগণের অভিপ্রায় এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে অবস্থান অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়ে এসেছে, জানিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ জনসম্মুখে এবং সরকারের কাছে সুস্পষ্ট মতামত তুলে ধরেছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের দুষ্কর্মগুলো প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রচার ও আলোচনায় রাখা দরকার। গত ১৫ বছর যা হয়েছে এবং জুলাইয়ে যা হয়েছে তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আলোচনা রাখা দরকার। এগুলো আলোচনা রাখতে পারলে একদিকে যেমন কার্যকর গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সুগম করবে, তেমনি ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ ও বিরোধ উসকে দিতে সক্ষম হবে না।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ শাসনামলে বিভিন্ন সময় দেশে জঙ্গি নাটক কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনের লুটপাট থেকে জনগণের দৃষ্টিতে অন্যদিকে রাখতে চেয়েছিল। তাদের অপশাসনকে টিকিয়ে রাখতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। সেই সময় গুম, খুনের ভয়ে এসব বিষয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি। পলাতক স্বৈরশাসক কী কারণে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে ঘিরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করত তা বর্তমানে গণতন্ত্রের জন্য একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিষয় হতে পারে বলে আমি মনে করি।
জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনা সুযোগ ফেলে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশের বিভিন্ন জায়গার ঘটে যাওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয়ে হামলার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সর্বধর্মীয় একটি নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তারেক রহমান।
কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, তবে কেউ যেন আপনার-আমার, আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কুক্ষিত করে রাখার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণের দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকটি মানুষ…. এই ঘরে যে মানুষগুলো আমরা উপস্থিত আছি, এই ঘরের বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে যেখানেই আছি না কেন, যে যার অবস্থান থেকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে… আপনাদের সকলের কাছে আমি আজ সেই আহ্বান জানাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের সামনে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে এই কারণে বিএনপি প্রথম থেকে এ সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বারবার জানিয়ে এসেছে, জানিয়ে আসছে।
বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার সঞ্চালনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস