চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চারদিনের টানা ভারী বর্ষণে আবারও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী অনেকে।
বৃষ্টির পানিতে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনি, দুয়ারু, পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী গ্রামের ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে।
জানা গেছে, রোববার থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকেছে। তখন থেকে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। খৈয়াছরা খাল সংস্কার বন্ধ থাকায় পানিবন্দি হয়েছে ওই এলাকার শতাধিক পরিবার।
খৈয়াছরা এলাকার বাসিন্দা সরোয়ার হোসেন জনি ও মো. জাহেদ জানান, পূর্ব খৈয়াছড়া ভেন্ডারপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এইবার অপরিকল্পিত খাল খননের কারণে এই বিপত্তি ঘটেছে। খাল খনন অসমাপ্ত রয়েছে। কিছুদিন পূর্বের ভারী বর্ষণে নতুন বাঁধ ভেঙে পানি ছুটেছে গ্রামের রুটিরুজির প্রধান অবলম্বন ফসলি জমিতে ও খেটে খাওয়া মানুষের বসত ভিটায়। খালের সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন না করলে আমার গ্রামের ফসলি জমি ও বসতভিটায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
মিরসরাই পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলে আমাদের বাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বসবাস করা দুষ্কর হয়ে যায়। মূলত পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় এমনটা হচ্ছে।
প্রতিবারের মতো এবারো ফেনাপুনি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ওই গ্রামের প্রায় পরিবারের রান্নাঘরে পানি ঢুকে গেছে। ফেনাপুনি কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি ঢুকে গেছে।
এছাড়া টানা বৃষ্টিতে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমজীবী, রিকশাচালক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা আয়রোজগার না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন। টানা চারদিন বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বৃষ্টিতে কাজ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের। দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় পড়ুয়া পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতে অফিসগামী, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রিকশাচালক আবুল কালাম জানু বলেন, চারদিনের টানা ভারী বর্ষণের কারণে আয় কমে গেছে। বৃষ্টিতে যাত্রীরা ঘরবন্দি হয়ে যাওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। পেটের দায়ে এই ভারী বর্ষণেও বেরিয়ে পড়েছি। অন্যান্য দিন এই সময়ে ৫০০-৬০০ টাকা ইনকাম করলেও আজ এখনও ২০০ টাকা ইনকাম করতে পারছি না।
আবুতোরাব বাজারের ভ্যানচালক মো. ইসমাইল বলেন, টানা ৪ দিনের ভারী বর্ষণে ৩ দিন ঘরে বন্দি ছিলাম। আজ চাল শেষ হয়ে গেছে। তাই বেরিয়ে পড়েছি। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হওয়ায় কোনো ভাড়া মিলছে না। আজ আয় না হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হবে।
এদিকে আবুতোরাব এলাকায় আবুতোরাব-গোভনীয়া খালের পানিতে ভেসে গেছে আবুতোরাব-বড়তাকিয়া সড়ক। প্লাবিত হয়েছে সরকারটোলা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িঘর।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা চারদিনের বৃষ্টিতে আমনের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছি। এখনো কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তালিকা চলছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার বলেন, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে জলাবদ্ধার খবর পেয়েছি। আমাদের কাছে শুকনো খাবার রয়েছে। তালিকা করে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া আজ দুপুর ১২টায় উপজেলার শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম