সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের জনজীবন

মেহেরপুর প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ মে, ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শনিবার (১০ মে) বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার একই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। চরম গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় অথবা রিকশায় চলাচল করছেন। গরমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে তারা মাথায় ক্যাপ অথবা গামছা পরে চলাচল করছেন। কৃষি শ্রমিকেরা বাঁশের তৈরি মাথাল মাথায় দিয়ে ক্ষেতে কাজ করছেন। তবে একটু পরপরই অনেককে ক্লান্ত দেহ নিয়ে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।

মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে আরধি স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী নয়ন জুতা স্যান্ডেল বিক্রি করেন। কাঠফাটা রোদের মধ্যে দুপুরে টিনের দরজা খুলে তাকে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। মাথায় একটি গামছা দিয়ে বসলেও প্রচণ্ডভাবে ঘামতে দেখা যায় তাকে।

নয়ন বলেন, জুতা বিক্রি করে ৬ সদস্যের সংসার চালাতে হয়। আজ খুবই গরমের দাপট। মনে হচ্ছে গরমে গা পুড়ে যাবে। মন বলছে না বসে থাকতে তারপরও পেটতো আর শোনে না।

মেহেরপুর বড় বাজারের ভ্যানচালক মাসুম জানান, তিনদিন বেশি গরম পড়ছে। ভ্যান না চালালে চলবে না তাই রোদের মধ্যে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা। রোদে বের হলে অসুখ হবে তারপরও বের হতে হয়। শরীরের কথা ভাবার সময় নেই তার। একই কথা জানান হরিরামপুরের দিনমজুর রবিউল আর কায়সারও।

এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি শরবত পান করছেন অথবা তরমুজ খাচ্ছেন। এতে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন পেটের পীড়ায়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়। বৃদ্ধরা ভুগছেন শ্বাসকষ্টে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ মার্চ থেকে এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ওই দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যায়ক্রমে ১৬ মার্চ ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ মার্চ ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৮ মার্চ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৯ মার্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ মার্চ ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১ এপ্রিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এভাবে ৩ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৩ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৪ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৫ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৬ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চলতি মাসের ৭ মে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ৮ মে ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা জানান, ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এছাড়া ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে জেলায় ১৮ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে ১২ দিন মৃদু, ৫ দিন মাঝারি এবং এক দিন তাপমাত্রা তীব্র তাপপ্রবাহের অঙ্ক ছুঁয়েছে জেলায়।

স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সকাল থেকেই আকাশ মেঘমুক্ত পরিষ্কার, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। পশ্চিম থেকে গরম হাওয়া প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকবে।

মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী জানান, তাপপ্রবাহ চলাকালে প্রয়োজনীয় কাজ দিনের প্রথমার্ধে সেরে নিতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়াই ভালো। প্রত্যেককে পানিসহ বেশি বেশি তরল খাবার ও ফলমূল খেতে হবে। ভাজাপোড়া ও চা-কফি এড়িয়ে চলতে হবে। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএকে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com