গাজা উপত্যকায় ত্রাণ নিতে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রেড ক্রসের একটি অস্থায়ী হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। রোববার (২৬ মে) এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শত শত মানুষ খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় আচমকা গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। গুলিবর্ষণের ঘটনাস্থলটি ছিল বিতরণকেন্দ্র থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এবং সেটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকা।
রেড ক্রস হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, গুলিতে অন্তত ২১ জন নিহত এবং আরও ১৭৫ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর সমর্থনে পরিচালিত বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে এর আগেও গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এই বিতরণ পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) দাবি করেছে, তারা রোববার সকালের আগে ‘কোনো অঘটন ছাড়াই’ ১৬টি ট্রাকে খাদ্য বিতরণ করেছে। সংস্থাটি আগের মতো এবারও মৃত্যুর খবরকে ‘ভুল তথ্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সংগঠনটি যে এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করে, সেখানে স্বাধীনভাবে সাংবাদিক বা তদারককারী প্রবেশ করতে পারেন না।
৪০ বছর বয়সী বাসিন্দা ইব্রাহিম আবু সাউদ জানান, আমরা সেনাবাহিনী থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে ছিলাম, তখনই গুলি চালায়। অনেক নারী-পুরুষ শহীদ হয়েছেন।
৩৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবু তায়িমা বলেন, আমার চাচাতো ভাই ও এক নারী গুলিতে মারা যান। আমার ভায়রাও আহত হয়েছেন। ওরা সরাসরি আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই বিতরণ ব্যবস্থাকে ‘হামাসের সহায়তা চুরি ঠেকানোর উদ্যোগ’ বলে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা একে মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করছে। কারণ, এতে সহায়তা পেতে ফিলিস্তিনিদের নির্ধারিত স্থানে যেতে বাধ্য করা হয় এবং তা আরও গৃহহীনতা ও বিপদের ঝুঁকি বাড়ায়।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হলেও সহায়তা পৌঁছানো এখনো খুবই কঠিন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অঞ্চলটির ৯০ শতাংশ মানুষ।
সূত্র: এপি, ইউএনবি
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ