বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

গুজরাটে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের বেশির ভাগই ভারতীয়

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে
ভারতের গুজরাটে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক অধিকাংশই ভারতীয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ বলছে শনিবার ভোররাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে তারা আটক করেছে, যারা বাংলাদেশি নাগরিক বলে পুলিশের সন্দেহ। তবে নিশ্চিতভাবে ৪৫০ জন বাংলাদেশিকে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক বিকাশ সহায়।

সংবাদসংস্থা পিটিআই সোমবার রাতে সহায়কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নথির ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করা গেছে যে ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে এখানে থাকছিলেন।

আটক হওয়া বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমাদের মনে হচ্ছে যে একটা বড় সংখ্যায় বেআইনি বাংলাদেশিদের পরিচয় আমরা নিশ্চিত করতে পারব।শনিবার ভোররাত থেকে প্রথমে আহমেদাবাদ ও সুরাতে এবং তারপরের দুই দিনে পুরো গুজরাটেই ‘বেআইনি বাংলাদেশি’ আটক করার জন্য অপারেশন চালাচ্ছে গুজরাট পুলিশ।

এদিকে ভারতজুড়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান ও হামলার অভিযোগ বেড়েই চলেছে।

এই বিষয়ে ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ নামক সংগঠন জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্তত ১০০টি অভিযোগ পেয়েছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের সন্দেহজনকভাবে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে হেনস্তা, নিগ্রহ, এমনকি মারধর করা হয়েছে।সংগঠনটি জানায়, ১৮ এপ্রিল মালদা জেলার ২৩ জন ফেরিওয়ালাকে উত্তর প্রদেশের কুশিনগরে স্থানীয় লোকজন বাংলাদেশি দাবি করে মারধর করে। মূলত বাংলাভাষায় কথা বলায় তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে আহত অবস্থায় তাদের পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয় এবং এক দিন পর মুক্তি দেওয়া হয়।

এরপর ২১ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থেকে ৬০ জন পরিযায়ী শ্রমিক একটি বাসে করে কর্মস্থল ওড়িশার কেওনঝড়ের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু ময়ূরভঞ্জ জেলার জসিপুরে পৌঁছানোর পর স্থানীয়দের সন্দেহে পড়েন তারা। শ্রমিকদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে মারধর করা হয়, ফলে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন।

আরো একটি অভিযোগ এসেছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থেকে। অভিযোগে বলা হয়, একজন ফেরিওয়ালা ইদের পরে ভদ্রক টাউন থানা এলাকায় ব্যবসা করতে গেলে তাকেও বাংলাদেশি হিসেবে অপমান ও হেনস্তা করা হয়।

পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের প্রধান আসিফ ফারুক বলেন, “২০১৪ সাল থেকেই এমন ঘটনা চলছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে পেহেলগামের হামলার ঘটনার পর এসব ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কোথাও পুলিশ, কোথাও হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর কর্মীরা পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম শ্রমিকদের টার্গেট করছে। তারা ভারতীয় নাগরিক হয়েও কেবলমাত্র ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে ট্যাগ পাচ্ছেন।”

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ভারতের সংবিধান অনুযায়ী দেশের যেকোনো নাগরিকের যেকোনো রাজ্যে কাজ করার অধিকার আছে। তাহলে কেন শুধুমাত্র বাংলাভাষী মুসলিম হওয়ায় আমাদের শ্রমিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে?’

এর আগে ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের যেসব অঞ্চলে বহু সংখ্যক কথিত ‘বাংলাদেশি’ থাকেন বলে পুলিশের সন্দেহ, সেই চান্দোলা লেক এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বেআইনি ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করেছে প্রশাসন। শনিবার ভোররাত থেকে গুজরাটজুড়েই শুরু হয়েছিল ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের খোঁজে তল্লাশি।

সোমবার রাত পর্যন্ত ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তাদের মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তারা বাংলাদেশি এবং বেআইনিভাবে গুজরাটে থাকছিলেন, জানিয়েছিলেন রাজ্যের পুলিশ মহানির্দেশক বিকাশ সহায়। এর পরেই আহমেদাবাদের যে অঞ্চলে কথিত বাংলাদেশিদের বাড়ি-ঘর ভাঙা শুরু হয়।

পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) শরদ সিংহল সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, ‘সিয়াসতনগর বাঙাল ভাস’ নামের একটি এলাকার অধিকাংশই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। আহমেদাবাদ মিউনিসিপাল করপোরেশন একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছিল যে অনেক বেআইনি নির্মাণ আছে সেখানে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ৫০টি বুলডোজার এবং প্রায় দুই হাজার পুলিশ কর্মীকে ওই ঘর ভাঙার কাজে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শরদ সিংহল।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com