ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদুপর-৪ আসন থেকে কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে ভাঙ্গায় আবারও সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ৮টা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নওয়াপাড়া ও হামিরদী বাসস্ট্যান্ড ও হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকার মহাসড়ক দুটি অবরোধ করা হয়েছে। এতে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
অবরোধকারীরা জানান—ভাঙ্গাকে বিভক্ত করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই মানা হবে না। তারা বলেন, আমরা ভাঙ্গার মানুষ, ভাঙ্গাতেই থাকতে চাই। নগরকান্দার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেব না।
এলাকাবাসী জানান, আগে ফরিদপুর-৪ আসনটি ছিল ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত। ফরিদপুর-২ আসন ছিল নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে। কিন্তু গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে দেশের ৪৬টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে।
ওই গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর জেলার দুটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে, ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে নগরকান্দা ও সালথা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
অবরোধের ঘটনার সময় ভাঙ্গা থানার পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে বিপুল সংখ্যক অবরোধকারীর কারণে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহন আটকা পড়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, আমরা মহাসড়ক ক্লিয়ার করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অবরোধকারীদের বুঝিয়েও কাজ হচ্ছে না। তবে জরুরি যানবাহনগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।
প্রসঙ্গত, সীমানা পুনর্বিন্যাসের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গায় দুই দফা ব্যাপক সড়ক অবরোধ করেছিলেন এলাকাবাসী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) আশ্বাসে সে সময় তারা অবরোধ তুলে নেন। এতে কাজ না হওয়ায় ওই দুই ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলালসহ সাতজনের পক্ষ থেকে ই-মেইলে ওই নোটিশ পাঠানো হয়।
ওই লিগ্যাল নোটিশে নির্বাচন কমিশনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ইসির ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করার কথা জানান শহিদুল ইসলাম।
তবে ওই দিনই (৭ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ‘প্রশ্ন তোলার’ কোনো সুযোগ নেই বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। সীমানা পুনরবিন্যাস-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বদলানোর ব্যাপারে তিনি সেদিন দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো ‘লাভ হবে না’।
বাংলা৭১নিউজ/একেএম