আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢুকতেই চোখে পড়ে নানান বয়সী মানুষ— তরুণ থেকে প্রবীণ। সবাই যেন একসঙ্গে ছুটে এসেছেন পবিত্র হজ বা ওমরাহর প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সাজাতে। তিন দিনব্যাপী জাতীয় হজ ও ওমরাহ ফেয়ারের-২০২৫ আজ শেষদিন। মেলায় প্রতিটি স্টলই ছিল জমজমাট। এর মধ্যে ওমরা পালন করতে ইচ্ছুক তরুণদের উপস্থিতিই ছিল বেশি।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে হজ-ওমরাহ মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক স্টলে দর্শনার্থীদের কৌতূহল চোখে পড়ার মতো। কেউ খরচের হিসাব নিচ্ছেন, কেউ বা সৌদি আরবে থাকার ব্যবস্থা কেমন হবে তা জানছেন, আবার কেউ সরাসরি বিমান টিকিট ও হোটেলের মান যাচাই করছেন। স্টলের কর্মীরা ধৈর্য ধরে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।
বিভিন্ন স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অভিজ্ঞ এজেন্টরা ভ্রমণপিপাসু মানুষদের প্যাকেজের পরামর্শ দিচ্ছেন। আবার কেউ বা খরচ সামর্থ্যের কথা জানিয়ে নিজেদের মতো হিসাব কষছেন। শুধু তথ্যই নয়, অনেক এজেন্সি দর্শনার্থীদের জন্য ছাড় ও গিফট ভাউচারও দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার সৌদি আরবের বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প শোনাচ্ছেন, যাতে সম্ভাব্য যাত্রীরা মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারেন।
মেলায় অংশ নেওয়া মদিনা স্টার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের বুথ থেকে জানানো হয়, দর্শনার্থীদের জন্য তারা এনেছেন আকর্ষণীয় সব অফার। সমাপনী দিনে প্রতিষ্ঠানটির ১২৮-১২৯ নম্বর প্যাভিলিয়নে এসে আগ্রহীরা হজ ও ওমরাহ্ বুকিং করতে পারবেন। ২০২৬ সালের হজের জন্য মাত্র ৩০ হাজার টাকায় প্রি-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি এবছর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে ট্রানজিট ও ডাইরেক্ট ফ্লাইটের মাধ্যমে ওমরাহ্ বুকিং করার সুবিধাও দিচ্ছে তারা।
মেলায় অংশ নেওয়া জবাল-ই-নূর ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের বুথ থেকে জানানো হয়, ২০২৬ সালের পবিত্র হজের নিবন্ধন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। সৌদি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৭ জুলাই থেকে ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রাক-নিবন্ধন ও চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, প্রাক-নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, সচল মোবাইল নম্বর এবং ৩০ হাজার টাকা ফি জমা দিতে হবে। আর মূল নিবন্ধনের সময় পাসপোর্ট ও চার লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।
এছাড়া দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে প্রতিষ্ঠানটি ফ্রি ওমরাহ পালন করার বিশেষ সুযোগ এবং মেলা চলাকালীন নিবন্ধনে আকর্ষণীয় ছাড় ঘোষণা করেছে।
মেলায় আসা একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, প্রথমবার হজে যেতে চাই। আগে নানা রকম বিভ্রান্তি ছিল, কিন্তু এখানে এসে অনুমোদিত এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে সরাসরি সবকিছু জেনে নিতে পারছি। এতে মনে অনেকটা শান্তি এসেছে। এ মেলার মাধ্যমে হজ ও ওমরাহ সেবা যে এতটা উন্নত তা দেখে আশাবাদী হয়েছি। আল্লাহ সুযোগ দিলে শিগগিরই নিবন্ধন করব।
মাহমুদুল হাসান নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, অনেক এজেন্সি আছে। তাই এখানে একসঙ্গে তাদের সেবা ও অফার তুলনা করতে পারছি। এতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছে। তাছাড়া, এখানে এসে বুঝতে পারলাম হজ ও ওমরাহ এখন অনেক সহজ হয়েছে। এজেন্সিগুলো যেভাবে সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরছে তাতে আমরা স্বস্তি পাচ্ছি। আবার সরাসরি এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছে।
গাজীপুর থেকে আসা শাহীন আহমেদ নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, আমি প্রথমবারের মতো ওমরাহ হজে যাওয়ার ইচ্ছে করছি। এখানে এসে সবকিছু হাতে-কলমে জানতে পারছি, যা খুব সহায়ক মনে হয়েছে।
এজেন্সিগুলোর প্রতিযোগিতার কারণে আমাদের মতো সাধারণ হাজিদের জন্য সুবিধা বেড়েছে। খরচ, প্যাকেজ, থাকার ব্যবস্থা—সবকিছু একসঙ্গে জানতে পেরেছি। আগে এসব তথ্যের জন্য দালালের পেছনে ঘুরতে হতো। এখন এখানে এসে স্বচ্ছভাবে সঠিক তথ্য পাচ্ছি, এটা অনেক ভালো লেগেছে।
অন্যদিকে, এজেন্সিগুলোর কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, এ ধরনের ফেয়ার গ্রাহকদের আস্থা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে। তারা বলছেন, মানুষ সরাসরি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে, প্রশ্ন করছে, আবার তুলনা করেও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে তাদের ভরসা বাড়ছে এবং আমাদের জন্যও সেবা প্রদানের সুযোগ বাড়ছে।
একটি অনুমোদিত হজ এজেন্সির কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা শুধু প্যাকেজ দিচ্ছি না, বরং সফর সম্পর্কিত সচেতনতা, মেডিকেল চেকআপ থেকে শুরু করে সৌদি আরবে যাত্রার আগে প্রশিক্ষণ পর্যন্ত নানা সুবিধা দিচ্ছি। মানুষ এসব শুনে বেশ উৎসাহিত হচ্ছে।
একইভাবে হাজিদের আবাসন সেবা দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানান, বর্তমানে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় সবাই মানসম্মত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে গ্রাহকেরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ে হজ্জ ও ওমরাহ ফেয়ার আজ সন্ধ্যায় শেষ হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ