১৯৫১ সালে তিব্বতের স্বাধীনতার পরপরই চীনা সরকার প্রথম তিব্বতে বৈজ্ঞানিক অভিযান শুরু করে। এটি ছিল চিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে প্রথম ব্যাপক বৈজ্ঞানিক অভিযান। ব্যারোমিটার, কম্পাস এবং অন্যান্য মৌলিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত ৫০ জনেরও বেশি গবেষক সেনাবাহিনীর সাথে তাদের অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
তিন বছরের দীর্ঘ অভিযানে পূর্বের চিনশা নদী থেকে শুরু করে পশ্চিমের এভারেস্ট, আর দক্ষিণে ইয়ারলুং সাংপো পর্যন্ত বিস্তৃত জরিপ চালানো হয়। এতে খনিজসম্পদ, জলবিদ্যুৎ, কৃষি, আবহাওয়া, ভাষা ও ইতিহাসসংক্রান্ত অমূল্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর সেখান থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় এক বিশাল স্বপ্ন—ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা।
দীর্ঘ গবেষণা, ব্যর্থতা আর পুনরারম্ভের পর অবশেষে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই তিব্বতের নিয়িংচি শহরে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং আনুষ্ঠানিকভাবে এই ‘ডাউনস্ট্রিম হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্ট’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্প হবে থ্রি গর্জেস ড্যামেরও তিনগুণ বড়। অর্থাৎ এটি শুধু চীনের নয়, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবিদ্যুৎ উদ্যোগ।
ইয়ারলুং সাংপো নদী তিব্বত অতিক্রম করে বিশ্বের সবচেয়ে গভীর গিরিখাত দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতের আসামে প্রবেশ করলে নাম হয় ব্রহ্মপুত্র। এই নদীর জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা ঘিরেই বারবার গবেষণা হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে পুনরায় শুরু হওয়া গবেষণার নেতৃত্ব দেন বিজ্ঞানী গুয়ান ঝিহুয়া। তিনি জীবনে ২২ বার তিব্বত সফর করেছেন এবং নয় বার পরিচালনা করেছেন ইয়ারলুং সাংপো অভিযাত্রা।
পরে ছেন ছুয়ানইউসহ অন্যান্য গবেষকরা নদীর প্রবাহ বদলানো, সুড়ঙ্গ খনন, ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মতো সাহসী প্রস্তাব দেন। তখন এগুলো ছিল নিছক বৈজ্ঞানিক কল্পনা। কিন্তু দুই দশক পর সেসব ধারণাই আজ বাস্তব রূপ পাচ্ছে।
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। পুরো অর্থই আসবে চীনের নিজস্ব তহবিল থেকে। বিদ্যুতের বড় অংশ তিব্বতের বাইরে সরবরাহ করা হবে, তবে স্থানীয় চাহিদাও পূরণ করা হবে।
এই বাঁধ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সহায়ক উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যেমন—২৩ জুন জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন অনুমোদন দিয়েছে ±৮০০ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ‘তিব্বত-গুয়াংডং ডিসি প্রজেক্ট’-এর, যার মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে যাবে গুয়াংডং-হংকং-ম্যাকাও গ্রেটার বে অঞ্চলে।
ইয়ারলুং সাংপো একসময় ছিল চীনের একমাত্র প্রধান নদী যেখানে বাঁধ নির্মাণ হয়নি। তবে ২০১৫ সালে মাঝপথে জ্যাংমু হাইড্রোপাওয়ার স্টেশন চালু হয়, যা ৫১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কিন্তু আসন্ন প্রকল্পের বিশালতার তুলনায় এটি একশ ভাগের এক ভাগও নয়।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ