শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
এমন দেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে মানুষের অধিকার কখনো ক্ষুণ্ণ হবে না চট্টগ্রাম-ঢাকা পেট্রোলিয়াম পাইপলাইনের উদ্বোধন, সাশ্রয় হবে ২২৬ কোটি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বন্ধ করুন, রোগীর অর্থ বাঁচান: চিকিৎসকদের আসিফ নজরুল মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেট পরিদর্শন করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সিন্ধু জল নিয়ে ক্ষুদ্ধ পাকিস্তান, ভারতকে ৪৮ ঘণ্টায় চার বার হুমকি! ট্রাম্প-পুতিন ঐতিহাসিক বৈঠক শেষ, যে সিদ্ধান্ত এলো শুভ জন্মাষ্টমী আজ ছাত্রশিবির, ‘গোপন রাজনীতি’ ও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত ঢাবি: বিবিসি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা শেখ মুজিব জাতির পিতা নন, স্বাধীনতা অর্জনে তার ত্যাগকে স্বীকার করি: নাহিদ ইসলাম

দুর্ভোগে নদীপাড়ের মানুষ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তিস্তার পানি কমলেও দুর্ভোগ বেড়েছে নদীপাড়ের মানুষের। পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার পানি কমলেও হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। নতুন করে বন্যার আশঙ্কাও দূর হয়নি।

লালমনিরহাট : তিস্তার পানি এখন বিপৎসীমার নিচে। তবে দুর্ভোগে পড়েছে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার মানুষ। গতকাল সকাল ৬টায় হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে। দুপুরে তা কমে দাঁড়ায় ২৪ সেন্টিমিটারে। বাড়িঘর আর ফসলের খেত থেকে নেমে গেছে ঢলের পানি। স্বাভাবিক হচ্ছে পানিবন্দি মানুষের পরিস্থিতি।

তবে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত থাকায় পাঁচ উপজেলার হাজারো মানুষ এখনো পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ নানান ফসলের খেত, ভেসে গেছে মাছ, সংকটে গবাদি পশুর খাদ্য। ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা।

এতে নিম্নাঞ্চলের ৩০ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানিবন্দি মানুষ এখন নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। কেউ উঁচু বাঁধে বা রাস্তার ধারে পলিথিন টানিয়ে গবাদি পশু রেখেছে, কেউ ল্যাট্রিন তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে। কারও ঘরের ভিতরে মাচা তুলে রান্না, কেউবা বাঁধের ধারে চুলা বসিয়ে খাবার রান্না করছে। সাপ-পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি কমা-বাড়ার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, নষ্ট হয়েছে চাষাবাদ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদি পশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে শিশুখাদ্য ও গবাদি পশুর খাবারের সংকট। প্লাবিত হয়ে আছে রাস্তাঘাটসহ ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আদিতমারীর গোবর্দ্ধন গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, ‘তিন দিন ধরে চরাঞ্চলের সব বাড়ি পানিবন্দি। শুকনো জমি নেই, গরু-ছাগল রাখার জায়গাও পাচ্ছি না।’ একই গ্রামের কাচুয়া শেখের আক্ষেপ-‘পাঁচ দিন ধরে ঠিকমতো রান্না হয়নি। গরু-ছাগল ও পরিবারকে উঁচু জায়গায় রেখেছি। ত্রাণ চাই না, চাই ভারত থেকে যেন আর পানি না আসে।’

পানিবন্দি ফিরোজ হাসান সুরুজ বলেন, ‘পানি ঢুকে পড়ায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হয়নি। গবাদি পশু ও পরিবারের লোকদের নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল। পুকুরের মাছও ভেসে গেছে। সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে আমরা রেহাই পাব।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে। কোথাও পানি কমায় ভাঙন দেখা দিলে দ্রুত সমাধানের জন্য প্রস্তুত আছি।’ তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফা বন্যা।

২৯ জুলাই প্রথম এবং ৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। সবশেষ ১৩ আগস্ট থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা আজ (শুক্রবার) থেকে নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে কিছু শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত বিতরণ করা হবে। আরও শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : অতিবৃষ্টির কারণে উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে একদিকে নদীভাঙন, অন্যদিকে বন্যায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও চর আলাতুলী ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, উজিরপুর ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল।

বন্যা উপদ্রুত এলাকায় খাবার পানি ও শুকনা খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যাপ্লাবিত এলাকার মানুষ। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় পানি পদ্মা নদীতে ১ সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফলে জেলায় বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও ভারতের ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় পদ্মাতীরবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার পরিবার এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোমরপানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে পাঠদান।

নদীভাঙন ও বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও চর আলাতুলী এলাকার মানুষ। ওই এলাকায় গত এক মাসের নদীভাঙনে প্রায় ১ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের জায়গায় বসবাস শুরু করেছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে পানি বৃদ্ধির কারণে নিম্নাঞ্চলের ১২ হাজার মানুষ প্লাবিত হয়েছে।

সেখানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানিসহ খাদ্যসংকট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনর তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছন নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর এলাকায় প্রায় ৮০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে এক সপ্তাহ ধরে।

এ সময় সাড়ে পাঁচ শ পরিবারের মাঝে সরকারি চাল ও দেড় শ পরিবারকে শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। তিনি উপদ্রুত ও ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

এদিকে অকালবন্যায় নিম্নাঞ্চলের ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. ইয়াছিন আলী। অন্যদিকে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, দুই-এক দিন পর পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলা৭১নিউজ/এবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com