উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজবাড়ীতে প্রতিদিনই বাড়ছে সব নদ-নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীর সব কয়টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলো। তবে পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম।
জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি প্রতিনিয়তই বাড়ছে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম এখনো না করলেও দ্রুতই বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে পদ্মা তীরবর্তী যে সকল নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল রয়েছে তা প্লাবিত হয়ে অনেক মানুষই পানিবন্দি হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি পেলে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পদ্মার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর, চর সেলিমপুর, কালিতলা, মেছোঘাটা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া দৌলতদিয়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকার কাউলজানি গ্রামের ৩ কিলোমিটার এলাকার ৬০/৭০ বিঘা কৃষি জমি বিলীন হয়েছে।অপরদিকে দৌলতদিয়ার ৩ ও ৭নং ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনে কয়েকটি ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে ও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়ার সবকটি ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট।
এদিকে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে নদীতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি হয়েছে। এতে দৌলতদিয়ার ৩ ও ৪নং ঘাটে ফেরি ভিড়তে পারছে না। শুধুমাত্র ৭নং ঘাট দিয়ে যানবাহন লোড আনলোড করা হচ্ছে। ঘাট সংকটের কারণে দৌলোদিয়া ঘাটে যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী রাজবাড়ীর ৪টি গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মা নদীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি ৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে পানির বিদৎসীমা ৮ দশমিক ২০ মিটার। এই পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।
পদ্মা ও হড়াই নদীর মহেন্দ্রপুর পয়েন্ট পানি ৮ দশমিক ৮৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্ট পানি বিদৎসীমা ১০ দশমিক ৫০ মিটার। পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৯ দশমিক ৮৭ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্ট পানির বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৫২ মিটার। এছাড়া গড়াই নদীর কামারখালী ব্রিজ পয়েন্টে পানি ৭ দশমিক ৪৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৭৫ মিটার।
সূত্রটি থেকে আরও জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ সেন্টিমিটার, মহেন্দ্রপুর পয়েন্ট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ সেন্টিমিটার, পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ সেন্টিমিটার এবং কামারখালীর গড়াই নদীর পয়েন্ট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ সেন্টিমিটার।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, উজানের পানির চাপে রাজবাড়ীর বিভিন্ন নদ-নদীর পানি গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি পেলের এখনো কোথাও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি এবং নিন্মাঞ্চল বা নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হবার খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন,পানি বৃদ্ধিতে কয়েকটি স্পটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে ভাঙন ঠেকাতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, পদ্মা নদীর পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এই সময়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি