মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০৭ অপরাহ্ন

নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তেই ভেঙে যায় যুদ্ধবিরতির আশা: নথি ফাঁস

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে এবং জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে এক সম্ভাব্য চুক্তি সামনে এসেছিল, যা ইসরায়েলের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সমর্থন করলেও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তা প্রত্যাখ্যান করেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের চ্যানেল-১৩ এক গোপন বৈঠকের প্রোটোকল ফাঁস করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।

এই গোপন নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ মার্চ প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। তখন প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হচ্ছিল। সেই সময়ই নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেয় দ্বিতীয় দফা চুক্তিতে না যাওয়ার।

অথচ এই দ্বিতীয় ধাপেই ছিল যুদ্ধবিরতির শর্তে সব জিম্মি মুক্তির সুযোগ। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করতেন, যুদ্ধ বিরতি এবং জিম্মি মুক্তির একটি বিস্তৃত চুক্তি সম্ভব ছিল। কিন্তু নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব নাকচ করেন। ফলে শুধু যুদ্ধ থামেনি, বরং ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অবস্থান আরও খারাপ হয়েছে।

চ্যানেল-১৩ জানায়, ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করতেন, যদি দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় যাওয়া হয়, তাহলে সব জিম্মিদের মুক্তি পাওয়া সম্ভব ছিল। এমনকি প্রয়োজন হলে পরে আবার যুদ্ধ শুরু করা যেত। জেনারেল নিটজান আলোন, যিনি বন্দি ও নিখোঁজদের বিষয় দেখতেন, বলেন—“জিম্মিদের মুক্তির একমাত্র সুযোগ দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা।”

এ আলোচনায় কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার, যিনি বর্তমানে আলোচক দলের প্রধান, বলেন—“যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়া হবে, অথচ হামাস থাকবে—এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।” তৎকালীন শিন বেত (গোয়েন্দা সংস্থা) প্রধান রোনেন বার বলেন—“আমার পছন্দ দ্বিতীয় ধাপে এগোনো। পরে আবার যুদ্ধ শুরু করা যাবে। আগে সবাইকে ফিরিয়ে আনি।”

চ্যানেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরে এই প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয়। অথচ প্রথম ধাপে ১৯ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চলেছিল এবং হামাস চুক্তি মেনেই চলছিল।

এই সিদ্ধান্তের পর ১৮ মার্চ নেতানিয়াহু পুনরায় গাজায় আক্রমণ শুরু করেন। একইসঙ্গে তিনি দ্বিতীয় ধাপের চুক্তি থেকেও সরে দাঁড়ান। পরে দোহায় হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনাও ব্যর্থ হয়, কারণ ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধের সমাপ্তি ও বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে আপস করতে চায়নি।

চ্যানেল ১৩-এর এই প্রতিবেদনের পর ‘হোস্টেজ ও মিসিং ফ্যামিলি ফোরাম’ এক বিবৃতিতে বলেছে—“আমরা দীর্ঘদিন ধরে যা বলছিলাম, এই রিপোর্ট তার প্রমাণ। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে চুক্তিগুলো বানচাল করেছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে।”

তারা আরও জানায়, জিম্মিদের পরিবারকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছিল মুক্তি সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে সরকার সেই প্রচেষ্টাই করেনি। “যুদ্ধের পর আরও ৫০ সেনা নিহত হয়েছে, কিন্তু একজন জিম্মিও ফেরত আসেনি।”

এই পরিস্থিতিতে গাজার যুদ্ধের ফলে ইসরায়েল শুধু আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিতই হয়নি, বরং ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। খাদ্য সংকট, চিকিৎসা সংকট এবং অবরোধে গাজা এক মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে এখনও ১০,৮০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি আটক রয়েছেন, যাদের অনেকেই নির্যাতন, অনাহার ও চিকিৎসাহীনতার শিকার বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে।

এছাড়া,গত বছরের নভেম্বরেই গাজায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমান রয়েছে।

তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com