সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৪ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
যত প্রভাবশালীই হোক চাঁদাবাজদের ছাড় নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’ তিন ক্যাটাগরিতে ১৭৫৭ জুলাইযোদ্ধার গেজেট প্রকাশ মাইলস্টোনের ঘটনায় আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে নির্বাচন উপলক্ষে দেড় লাখ পুলিশকে ট্রেনিং দেওয়া হবে: প্রেস সচিব ঝুঁকি নিয়ে আহতদের সেবা দেওয়া চিকিৎসকরা ‘জুলাইয়ের নায়ক’: প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদের খসড়া তৈরি, ১২ বিষয়ে ঐকমত্য বাংলাদেশকে আবার গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান : ফখরুল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে হত্যার হুমকি ইসরায়েলের বিদেশি মেডিকেল টিমের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

জুলাই সনদের খসড়া তৈরি, ১২ বিষয়ে ঐকমত্য

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

আরো দুটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল রবিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম বৈঠকে এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন—এমন প্রস্তাবে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একই সঙ্গে তারা স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও একমত হয়েছে বলে জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকবেন না—এ প্রস্তাবে বিএনপির আপত্তি নেই।

তবে শর্ত ছিল, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কমিটি থাকলে বিষয়টি মানা হবে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত বিধানের প্রস্তাবে আপত্তি নেই। এর বাইরের বিষয়ে আলোচনা হলে শর্ত বহাল থাকবে।’ পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব রয়েছে—এই কমিশন গঠিত হবে ৭২ বছরের কম বয়সী একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে।
কমিশনের সদস্যসচিব হবেন ৬২ বছরের কম বয়সের অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা। কমিশনে সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তাঁদের মধ্যে থাকবেন সংসদে সরকার দলের নেতা (লিডার অব দ্য হাউস), বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধী দল থেকে হবেন)। এ ছাড়া একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, যিনি হাইকোর্ট বিভাগে অন্তর্ভুক্ত এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন; একজন মানবাধিকারকর্মী, যিনি কমপক্ষে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
কমিশনে অন্তত দুজন সদস্য নারী থাকতে হবে।

গতকাল আলী রীয়াজ আরো জানান, রাজনৈতিক দলগুলো একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়েছে, যা পুলিশের জবাবদিহি, দায়বদ্ধতা ও জনবান্ধবতা নিশ্চিত করবে। এখন এর গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে।

গতকালের বৈঠকের শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘কমিশন এরই মধ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে এবং এটি বিবেচনার জন্য আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে একটি করে খসড়া প্রেরণ করা হবে। সেটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতামত জানালে এতে সন্নিবেশ করা হবে।

সবার মতামত পাওয়ার পর সেগুলোকে সন্নিবেশ করে চূড়ান্ত জুলাই সনদের পটভূমি, প্রাথমিক বক্তব্যগুলো, অঙ্গীকার এবং প্রক্রিয়ার বিষয়বস্তুগুলো অন্তর্ভুক্ত করে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তুলে ধরা হবে।’

এ সময় তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বড় ধরনের কোনো মৌলিক আপত্তির বিষয় উত্থাপিত না হলে সেটি নিয়ে বৈঠকে আর আলোচনা করা হবে না।

সময়ের স্বল্পতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি সবাইকে বলেন, ‘আমাদের আলোচনা যেকোনোভাবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আলোচনা শেষ করার মাধ্যমে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে চাই। ১০টি বিষয়ে আমরা এক ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছেছি (গতকালের বৈঠকের আগে), কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট আছে এবং সাতটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু তা অসমাপ্ত রয়েছে এবং তিনটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।’

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই সনদ দ্রুত প্রণয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত সব বিষয়ে ঐকমত্য গড়তে আগামী কিছুদিন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলমান থাকবে।

যেসব বিষয়ে ঐকমত্য : সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন ছাড়াও আরো যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো হলো : জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ১৪১(ক)-এ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাব; বিষয়গুলো হলো—অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে। আর জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এ ছাড়া জরুরি অবস্থা চলাকালে অনুচ্ছেদ ৪৭(ক)-এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো খর্ব করা যাবে না।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৯৫-এ সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করবেন।

অবশ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে তবে তারা সংবিধানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতির মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগদান করবেন—এমন বিধান সংযোজন করতে পারবে।

তবে শর্ত থাকে যে অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের অভিযোগের কারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬-এর অধীন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তপ্রক্রিয়া চলমান থাকলে তাঁকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগদান করা যাবে না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনেও ঐকমত্য হয়েছে; এতে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন।

আরো যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে : সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; এতে সরকারি হিসাব, অনুমিত হিসাব, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি—এই চারটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ সংসদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধী দলের মধ্য থেকে দেওয়া হবে।

অর্থাৎ বিরোধী দলগুলো সংসদে যে কয়টি আসন পাবে, তার অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পাবে। নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; এ বিষয়ে আশু এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর এবং সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি নির্দিষ্ট কমিটি গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এসংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মনোনয়নের জন্য একটি নির্বাচক কমিটি গঠিত হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।

কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দল থেকে), প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এই কমিটি বিদায়ি কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে প্রার্থী অনুসন্ধান শুরু করবে।

যোগ্যতা-অযোগ্যতা, প্রার্থী আহবান এবং অনুসন্ধান পদ্ধতি নির্ধারিত হবে সংসদে প্রণীত আইনের মাধ্যমে। কমিটি অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত স্বচ্ছভাবে যাচাই-বাছাই করে সর্বসম্মতিক্রমে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রতিটি কমিশনার পদের জন্য একটি করে নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

রাষ্ট্রপতি তাঁদের পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন। স্পিকারের অধীন সংসদ সচিবালয় এই কমিটিকে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেবে। রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যাঁরা একমত নন তাঁরা জাতীয় সনদে নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবেন।

যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি : আলোচনা হলেও ঐকমত্য হয়নি এমন বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি (এনসিসির পরিবর্তে নতুন প্রস্তাব); বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অন্য যেকোনো কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হয়।

প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমতা কমানোর জন্য সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা—এই তিন অঙ্গের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন।

কিন্তু বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এনসিসি গঠনের প্রস্তাবটি সংশোধন করে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে।

এই কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার, প্রধান বিরোধী দল ছাড়া অন্যান্য বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি, প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।

এই কমিটির দায়িত্ব হবে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য নাম চূড়ান্ত করা। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিন বাহিনীর প্রধান নিয়োগের বিষয়টি এই কমিটির দায়িত্বের বাইরে থাকবে।

জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দল এই প্রস্তাবে নীতিগতভাবে একমত। তবে এই কমিটির বিষয়েও বিএনপিসহ কয়েকটি দলের জোরালো আপত্তি আছে।

বিএনপি বলেছে, এ ধরনের কমিটি করা হলে সরকার দুর্বল হবে। ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোট নিয়েও ঐকমত্য হয়নি। এই প্রস্তাবে বেশির ভাগ দলের আপত্তি আছে। বিএনপি ও জামায়াত মনে করে, এই ব্যবস্থা এখনই বাস্তবায়ন করা কঠিন। ইসলামী আন্দোলন এর পক্ষে নয়।

গতকালের আলোচনায় কমিশন সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও উচ্চকক্ষে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়েও ঐকমত্য হয়নি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে দলগুলোর বেশির ভাগ একমত হলেও উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি ও ক্ষমতা নিয়ে মতভিন্নতা আছে।

জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে। অন্যদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিপক্ষে। তারা নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায়। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন নিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে একমত হতে পারেনি দলগুলো।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে একমত হলেও কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে এখনো একমত নয় দলগুলো। সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতির মধ্যে দুটির সংশোধনীতে দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

গতকালের আলোচনায়ও এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। এ নিয়ে বৈঠকে উত্তেজনাও দেখা দেয়। বামপন্থী দলগুলো বিদ্যমান ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ বহাল রেখেই কমিশনের প্রস্তাবিত ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করার পক্ষে অবস্থান নেয়।

বিএনপি, জামায়াতসহ ডানপন্থী দলগুলো কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলে। এনসিপি কয়েকটি দল আগের মূলনীতি বাতিল করে কমিশনের প্রস্তাব যুক্ত করার দাবি জানায়।

সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রক্রিয়ার মতো কিছু বিষয় এখনো আলোচনার অপেক্ষায়। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে সব দল একমত হলেও এর গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ বিষয়ে যে ফর্মুলা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দিয়েছে, তাতে রাজি নয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

দুটি দলই চায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলী নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সরকারপ্রধান বাছাই করবে। সেটি সম্ভব না হলে আগের নিয়মে সাবেক প্রধান বিচারপতি হবেন প্রধান উপদেষ্টা।

তবে এতে রাজি নয় এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল। তারা কমিশনের প্রস্তাবমতো সরকার, বিরোধী দল এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের প্রস্তাবিত নাম থেকে র্যাংক চয়েস (পছন্দক্রম) ভোটে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন চায়। সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব হচ্ছে, সংসদ হবে দুই কক্ষের।

সংবিধানের সব সংশোধনীর ক্ষেত্রে আলাদাভাবে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন প্রয়োজন হবে। সংবিধানের প্রস্তাব, মূলনীতি, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ইত্যাদি সংশোধন করতে উভয় কক্ষের পাশাপাশি গণভোটে পাস হতে হবে। এই প্রস্তাব এখনো আলোচনার অপেক্ষায়। এ প্রস্তাবের কিছু ক্ষেত্রে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আপত্তি রয়েছে।

বিএনপি উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিপক্ষে। সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন কিভাবে হবে তা নিয়েও ভিন্নমত রয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সংস্কার বিষয়টিকে সংসদের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। দলটির দাবি, সংস্কারের ম্যান্ডেট এই সরকারের হাতেই রয়েছে।

এদিকে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে জানানো হয়েছে, কোনো বিষয়ে একমত না হলে ‘জাতীয় সনদে’ সংশ্লিষ্ট দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) দিতে পারবে ।

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও ‘একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না’ বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এ বিষয়েও ‘নোট অব ডিসেন্টে’ দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কমিশন। জানানো হয়েছে, কোন কোন প্রস্তাবে আপত্তি তা উল্লেখ করেই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করবে দলগুলো।

বাংলা৭১নিউজ/এসএম

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com