শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন

ভাইয়ের খুনিকে জড়িয়ে ধরলেন বোন, অশ্রুসিক্ত ক্ষমার বার্তা

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এল পাসোর এক ওয়ালমার্টে বর্ণবৈষম্যমূলক হামলায় প্রাণ হারান ২৩ জন। সেই ভয়াবহ ঘটনার পাঁচ বছর পর আদালতে এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখা গেল। নিহতদের একজনের বোন ইয়োলান্ডা টিনাজেরো, খুনিকে জড়িয়ে ধরার জন্য বিচারকের অনুমতি চাইলেন। বিচারক অনুমতি দিলে, কাঁদতে কাঁদতে গিয়েই তাকে জড়িয়ে ধরেন তিনি।

ইয়োলান্ডার ভাই ৬০ বছর বয়সী আর্তুরো বেনাভিদেস ছিলেন একজন সদা হাস্যমুখ, কোমল হৃদয়ের মানুষ। আদালতে দাঁড়িয়ে ইয়োলান্ডা বলেন, ‘আমি শুধু তোমাকে জড়িয়ে ধরে বোঝাতে চাই, আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি, আর আমার এই কষ্টটা তুমি অনুভব করো।’

এই দৃশ্য আদালতে উপস্থিত সবার চোখে জল এনে দেয়। খুনির হাতে হাতকড়া থাকলেও মানবতা এবং সহানুভূতির এই মুহূর্ত ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। ইয়োলান্ডার মেয়ে বলেন, আমি জানি না মা কীভাবে  এটা করতে পারলেন, আমি কখনো পারতাম না। কিন্তু মা তাকে এমন কিছু দেখালেন, যা কোনো ভুক্তভোগী দেখাতে পারেনি—ভালোবাসা ও ক্ষমা।

এ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি প্যাট্রিক ক্রুসিয়াস একজন শ্বেতাঙ্গ ঝরে পড়া কলেজছাত্র। অনলাইনে ‘হিস্পানিক আগ্রাসন’-এর ষড়যন্ত্র তত্ত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে বন্দুক হাতে এলোপাথাড়ি গুলি চালান তিনি। এখন তিনি মৃত্যুদণ্ড না পেলেও বহু বছর কারা ভোগ করবেন।

নিহত একজনের মেয়ে স্টেফানি মেলেনদেজ বলেন, তিনি খুনির সঙ্গে কথা বলতে চান না, বরং তার বাবার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি পড়েন যে, ‘বাবা গুলির সময় নিজের স্ত্রী ও ৯ বছরের নাতনিকে আগলে রেখে প্রাণ দিয়েছিলেন।’ তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে কেটলিন বলেন, ‘আমি একজন বেঁচে ফেরা মানুষ। আমি জীবনের পথে এগিয়ে যাব, তোমার ভয় আমাকে আর আটকাতে পারবে না।’

তবে সবাই যে শুধু ক্ষমা করেছেন তা নয়। ডিন রেকার্ড নামে একজন বলেন, ‘তুমি মানবতার প্রতি এক লজ্জার দাগ। আমি চাই প্রতিদিন তুমি জেগে উঠে আফসোস করো যে তুমি এখনো বেঁচে আছো। তিনি বলেন, ক্ষমা চাইলে নিজেকেও ক্ষমা করতে জানতে হয়। সেই জন্যই আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। আল্লাহ তোমার আত্মার প্রতি দয়া করুন।

এই হামলায় আহত লিলিয়ানা মুনোজ জানান, তিনি আগে ছিলেন হাসিখুশি, নাচতে ভালোবাসতেন। কিন্তু এখন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভয় পেয়ে যান। তার হাঁটতে লাঠি লাগে, পা টেনে হাঁটেন। তবুও তিনিও ক্ষমা করেছেন।

সবশেষে নিহত ১৫ বছর বয়সী হাভিয়ের রদ্রিগেজের বাবা ফ্রান্সিসকো আদালতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেন, আমার চোখে চোখ রেখে তাকাও। আমার ছেলের জন্মদিনে এখন আমাকে কবরস্থানে যেতে হয়। কিন্তু তারপরও তিনি বলেন, তুমি আমাদের ভাঙতে চেয়েছিলে, কিন্তু তুমি আমাদের আরও কাছে এনেছো। এই ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে—ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় জবাব।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com