বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন

মনোনয়ন পেতে বিএনপিতে দৌড়ঝাঁপ

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি আসনে গড়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আটজন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি আসনে ১০-১২ জন করে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। এরই মধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় তারা গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন লাভে তাঁরা কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ করছেন।

এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামত ও জনমত জরিপকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা, দলীয় নেতাদের মতামত, দলের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা, বিগত দিনের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকা, সততা, শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব মানদণ্ড যাচাই করেই বিএনপি প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তাসহ যাঁকে মনোনয়ন দিলে আসনটি নিশ্চিত হবে, তাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। কারণ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় একটা আসন জয়লাভের ওপর সরকার গঠন নির্ভর করে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠন পরিচালনা করে নির্বাচন করার জন্য। ফলে নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই।

‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে’-লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে এমন ঘোষণার পর পূর্ণ উদ্যমে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনগুলোতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে একাধিক জরিপ সম্পন্ন করেছে বিএনপি। গত দেড় দশকে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটিতে অংশ নিলেও দুটি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এই দীর্ঘ সময়ে দলটির নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থাকলেও নির্বাচনি চ্যালেঞ্জে ঘাটতি রয়েছে। প্রার্থী নির্বাচনে এবার সেদিকটিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের ঘাটতি পোষাতে তাই প্রার্থী বাছাইয়ে একাধিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।

বিএনপিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপি এমন কাউকে প্রার্থী করবে না, যিনি মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় গেলে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের রোষের শিকার হবেন। নির্বাচনি আসনে যিনি বেশি জনপ্রিয়, যাঁকে জনগণ চাইবে, যাঁকে দিয়ে আসন উদ্ধার হবে, দলটি এবার তাঁকেই মনোনয়ন দিতে চাইছে। এবারের নির্বাচনে ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে সব ধরনের তৎপরতা শুরু করেছেন। প্রার্থীরা মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ, উঠান বৈঠকসহ নির্বাচনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ জানান, তিনি বরিশাল-৫ (সদর) আসনে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রের সব কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। এলাকায় সিংহভাগ সময় দিচ্ছেন। তাঁর মতে, অতীত কর্মকাণ্ড এবং এলাকার জনপ্রিয়তা বিবেচনা করা হলে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নিয়মিত এলাকায় কাজ করছি। যেসব যোগ্যতায় মনোনয়ন দেওয়া হবে, সে হিসেবে প্রার্থীদের মধ্যে আমিই যোগ্য। আওয়ামী লীগ আমলে দীর্ঘদিন কারাবরণ করে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে মাকে দাফন করেছি। স্ত্রীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ৪ জুলাই তাড়াশে কঠোর আন্দোলন গড়ে ওঠে আমার পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্বেই। আশা করি, এবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান তাড়াশ থেকে আমাকেই দলের প্রার্থী করবেন।’

জেদ্দা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ আজাদ চয়ন জানান, ঢাকা-১ (দোহার) আসন থেকে তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ, মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। অপরাজেয় বাংলাদেশ নামক সংগঠনের সহসভাপতি হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা পালন করে চলেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাঁর দাবি, সঠিক মূল্যায়ন করলে তিনি মনোনয়ন পাবেন।

বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে এবার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হতে পারেন। পাশাপাশি দলের পোর্টফোলিওধারী ও অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদেরও বিবেচনায় রাখা হবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সৎ, যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী পেতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবেন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। নেতাদের নামে অভিযোগ, গণমাধ্যমের খবর, দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া, মাঠের গ্রহণযোগ্যতা, দলের প্রতি আনুগত্য ও জনগণের সঙ্গে কার কতটুকু সম্পর্ক, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হিসাবনিকাশ এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে কতগুলো নিজের দলের জন্য রাখবেন এবং কত আসন শরিকদের ছাড় দেবেন, সে হিসাবও কষছেন তিনি। বেশ কয়েকজন নেতাকে তিনি নির্বাচনি এলাকায় কাজ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শরিকদের কিছু সম্ভাব্য প্রার্থীর ক্ষেত্রেও তিনি একই বার্তা দিয়েছেন।

শরিক দলগুলোও সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে ছাড় পেতে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনসহ বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৫৯টি আসন শরিকদের জন্য ছেড়ে দেয় বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্য থেকে এবার যাঁদের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, শুধু তাঁদেরকেই আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে ঠিক কতটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের ‘দুঃশাসনকালে’ যেসব দল ও জোট তাদের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল-এমন রাজপথের সঙ্গীদের নির্বাচনি সঙ্গী হিসেবে রাখতে চাচ্ছে বিএনপি। এজন্য কোন আসনে কোন দলকে ছাড় দেওয়া যেতে পারে, মাঠপর্যায় থেকে সে তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজপথের মিত্রদল জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, তাঁর নির্বাচনি এলাকা নড়াইল-২ আসনে নিয়মিত হাটবাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক করছেন। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি জোটগতভাবে যত কর্মসূচি দিয়েছে সব কর্মসূচি পালন করেছেন। তিনি আশাবাদী মিত্রদলগুলোকে মূল্যায়ন করলে তাঁর আসনে ছাড় দেওয়া হবে।

বাংলা৭১নিউজ/একেএম

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com