মাদক ও দুর্নীতি সরকার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
সরকারের পক্ষ থেকে সবসময় দাবি করা হয় মাদকের বিস্তার কমে আসছে। এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান আছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কিন্তু কোনোদিন এটা দাবি করিনি। দুটি জিনিস আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি- একটি হলো মাদক আরেকটি দুর্নীতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, কিন্তু মাদক আমরা কমিয়ে এনেছি এটা আমি কোনোদিন বলিনি। আপনাদের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার, এটা কমিয়ে আনতে হবে।’
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র করে মাদক বন্ধ করা যাবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘মাদক যাতে বাইরে থেকে ঢুকতে না পারে, যারা মাদক ঢুকতে সাহায্য করে তাদের সংবাদও যদি আমাদের দেয়, তবে আমাদের জন্য ভালো। আমাদের বাহিনী যদি সঙ্গে যুক্ত থাকে সে তথ্য আমাদের দেবেন। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি বলেন, ‘’আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে আমরা ইতিমধ্যে ক্লোজ করেছি। কিছুদিনের মধ্যে সে কাশিমপুর কিংবা কেরানীগঞ্জে ঢুকে যাবে। এখনই তার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলবো না।’
এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র করছে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
‘মাদকের কুফলের বিষয়ে আমাদের সব শ্রেণির লোককে বুঝতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে হয়তো কিছু কিছু আসে, কিন্তু অন্যান্য যারা মাদক বহন করতেছে, আর যারা গডফাদার তারা তো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বসে আছে। আমাদের সঙ্গেই চা-টা খেয়েটেয়ে থাকে, এরা আমাদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে। এদের বিষয়ে আমরা প্রোপার অ্যাকশন নেবো।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুধু মাদক বহনকারীদের ধরতে পারি, গডফাদারদের খুব একটা ধরতে পারছি না। আপনাদের যেভাবেই হোক গডফাদারদের ধরতে হবে। আপনাদের হাতিয়ার দেওয়া হয়েছে, এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হলো। আপনাদের লোকবল বাড়ানোর বিষয়টি, সেটাও করে দেবো। কিন্তু গডফাদার ধরতে হবে। বহনকারী ধরে কিন্তু লাভ নেই। গডফাদার ধরলে এটা পুরোপুরি বন্ধ হবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অন্য দেশের একটা বাহিনী পুরোপুরি নির্ভর করছে ইয়াবার ওপর। এটা থেকে আয় করে তারা ঘর সংসার চালাচ্ছে। এটা কীভাবে বন্ধ করা যায় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বলবো না আমরা যে খুব সফল হয়েছি। আপনারা অনেক সময় নামও জানেন এই যে বদি। এ রকম এখন অনেক বদি হয়ে গেছে।’
রাজধানীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বারগুলোতে অবৈধ মাদক বিক্রি করা হচ্ছে- এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ বলেন, ‘এটা হচ্ছে বাংলাদেশে একটা সামাজিক ব্যাধি। আমাদের অফিসাররা আছে, সংবাদমাধ্যমে লোকজন আছে, অন্যান্য গোষ্ঠীর লোকজন আছে- সবাই মিলেই এটা চলে, আমি স্বীকার করছি। আমরা আমাদের সাধ্যমত অভিযান চালাচ্ছি।’
এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় আইনের আওতায় চলে আসবে। যার নামে আসুক আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।’
অনুষ্ঠানে এর আগে ৩২টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এবি