চট্টগ্রামে গেস্ট হাউসে সাংবাদিক পরিচয়ে কক্ষে কক্ষে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া হান্নান রহিম তালুকদার (৪১) ছিলেন চুরিসহ একাধিক মামলার আসামি। সর্বশেষ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সোমবার (১৬ জুন) চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে নগরের চান্দগাঁও থানায়। এ মামলায় সোমবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, পপুলার গেস্ট হাউসে কর্মরত জাকির হুসেন নামে একজন মামলাটি করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আসামি হান্নান রহিম তার সঙ্গীদের নিয়ে গত ৫ জুন চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া পপুলার গেস্ট হাউজ আবাসিক হোটেলে সাংবাদিক সেজে অভিযান পরিচালনা করেন। তারা হোটেলে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করে ও হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে। এসময় তারা চাঁদা না পেলে হোটেল ব্যবসা বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দেয়।
অভিযুক্ত হান্নান রহিম তালুকদারের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়। তার বাবার নাম হাজী মফজল আহমদ। বর্তমানে তিনি চান্দগাঁও থানার খরমপাড়া ডিপুটি আবাসিক রোড এলাকায় থাকেন।
চান্দগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, হান্নান রহিমের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় ২০০৬ সালের ৯ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে একটি মামলা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল নগরের চান্দগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে মারধর, হত্যাচেষ্টা ও চুরির মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হান্নান রহিম নিজেকে ‘দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ’-এর সম্পাদক ও সিএসটিভি২৪-এর চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। একইসঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে কয়েক মাস আগে থেকে তিনি প্রেস ক্লাবের সদস্য বলে উল্লেখ করা শুরু করেছেন। তবে তার নাম কোনো স্বীকৃত সাংবাদিক সংগঠনের তালিকায় নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, হান্নান রহিম তার মালিকানাধীন দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদের স্টিকার লাগান বিভিন্ন রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়িতে। এর বিনিময়ে তিনি মাসিক টাকা আদায় করে থাকেন। বিভিন্ন গাড়িচালককে সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচয়পত্র দিয়েছেন হান্নান রহিম। অতীতে একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন তিনি।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হলে হান্নান হঠাৎ নিজেকে যুবদল নেতা দাবি করা শুরু করেন। নিজেকে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব পদপ্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেন। গ্রেপ্তারের পর হান্নান রহিমের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিএনপির বিভিন্ন সিনিয়র নেতা, কয়েকজন পেশাজীবী নেতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুক প্রোফাইলে দিয়ে নিজেকে জাহির করেন হান্নান রহিম।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন বলেন, পপুলার গেস্ট হাউসে সাংবাদিকতার নামে যা হয়েছে তা বেআইনি। অভিযুক্ত হান্নান রহিমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটির তদন্ত চলছে। এর আগে হান্নান বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, কয়েকদিন আগে হান্নান রহিম পপুলার গেস্ট হাউসে ক্যামেরা ও বুম হাতে নিয়ে গিয়ে একের পর এক কক্ষে প্রবেশ করে অতিথিদের জেরা করেন। তিনি পুরো ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি একাধিক অতিথির কাছে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চান এবং এক দম্পতির বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলেন। তার এ আচরণকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ ও হয়রানি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, এভাবে কক্ষে কক্ষে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না, এটি বেআইনি ও অনৈতিক। অভিযুক্ত ব্যক্তি আমাদের সংগঠনের সদস্যও নন।
বাংলা৭১নিউজ/এবি