মৎস্য ও প্রাণী উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে কৃষকের দিকটা সেভাবে দেখা হয় না। শহুরে মানুষের খাদ্য জোগান এবং দাম নাগালে রাখতে আমদানির মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়। আমাদের খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে হবে, যাতে ভোক্তা এবং কৃষক দুই পক্ষই উপকৃত হন।
সোমবার (৫ মে) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘কৃষি, নিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি’ সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বণিক বার্তা আয়োজিত ওই সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের বিষয় ছিল খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উপদেষ্টা আরও বলেন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের কথা বলা হচ্ছে। সেটা করতে গিয়ে কোনো ক্ষতি করছি কি না সেটিও দেখতে হবে। কারণ এর কারণে গবাদিপশুর ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এখানে ভোক্তার দিকটাও দেখতে হবে যেন তারা নিরাপদ খাদ্য পায়। আবার কৃষকের দিকটাও দেখতে হবে যেন তারা উৎপাদন করে লাভবান হন।
খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে যদি প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ফেলি তাহলে আবার সেটি খাদ্য পণ্য হবে কি? সেটা শিল্প পণ্য হয়ে যাবে। যদি কৃষি পণ্যকে শিল্প পণ্যের মতো উৎপাদন করি তাহলে সেটি খাদ্য থাকবে না এবং সেখানে কৃষকও থাকবে না।
তিনি বলেন, এক সময় কৃষির অধীনেই মৎস ও প্রাণী সম্পদ ছিল। এখন এগুলো আলাদা হয়েছে। পণ্যভিত্তিক কৃষকও আলাদা হয়েছে। মৎস্যের ক্ষেত্রে আমরা যদি দেখি, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ আরোহণে বাংলাদেশ ভারতের পরই ২য় স্থানে আছে। অথচ হাওর, নদী-নালা ধ্বংস করছি আমরা। জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে চাচ্ছি যখন তখন আবার দেখা যাচ্ছে কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশকে মাছ মারা যাচ্ছে।
হাওরে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওর মাছের অনেক বড় একটি উৎস। আবার অনেক সময় আগাছা পরিষ্কার না করে কীটনাশক দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। এতে করে গরু ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে।
এমন ঘটনাও আমরা দেখেছি, জমির বাঁধাকপি খেয়ে ছাগল মরে গেছে। কারণ সেখানে কীটনাশক ছিল। সেই বাঁধাকপি কিন্তু মানুষও খাচ্ছে। ফলে এখানে একটা নীতি গ্রহণ করা দরকার। এসব বিষয়ে কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নানা সময় কৃষি পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করি। কোনো প্রকার বাজার অ্যানালাইসিস ছাড়াই অনেক সময় এটা করা হয়। তখন কিন্তু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার যে বছর ভালো ফসল হয়, সেই বছর পণ্যের দাম পড়ে যায়, কৃষকের আয় কম হয়। শহুরে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে গিয়ে, দাম নাগালে রাখতে গিয়ে কৃষকের ক্ষতি করছি।
অথচ কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে নজর দেওয়া, তার টিকে থাকা নিশ্চিত করার দিকে ততটা মনোযোগ দেখা যায় না। ফলে খাদ্য নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত খাদ্য সার্বভৌমত্যে। খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হলে কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ের অধিকার নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের এখানে মাংস উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। আগস্টের বন্যার কারণে ডিমের দাম যখন বেড়ে গিয়েছিল, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানি করে। তখন এখানে যারা উৎপাদক তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানির জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
তারা কম দামে মাংস দেবে। এখন আমাদের তো লাখ লাখ খামারি আছে। আমাদের এখানে এক কোটি ২৪ লাখের বেশি গরু-ছাগল মজুত আছে। ২২ লাখের মতো চাহিদার চেয়ে বেশি আছে। এটি করলে এখানে খামারিরা টিকে থাকতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম, টি. কে. গ্রুপের ডিরেক্টর মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার, এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলা৭১নিউজ/এবি