বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে অতি জোয়ার ও বাতাসে ভোলায় হাজার হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার সাত উপজেলার ৭০টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন।
রোববার (১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার মানুষ বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ায় করুণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন।
জোয়ারের পানির চাপে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ঢালচর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভদ্র পাড়ার মো. রফিকের বসতঘর। রফিক ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকে সব ঠিক ছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে শুরু হয় বৃষ্টি ও বাতাস। তখনও রফিক স্ত্রী, সন্তান ও মেয়ে জামাই নিয়ে বসতঘরে ছিলেন। কিন্তু জোয়ারের পানি বেড়ে প্রবল চাপে তার বসতঘরে গলা সমান পানি উঠে যায়।
এতে তার চোখের সামনে একে একে ভেসে যাচ্ছিলো বসতঘরের মালামাল। পরিবার সবাই জীবন বাঁচাতে পানির মধ্যে সাঁতার কেটে চলে যান জামাই বাড়িতে। পানি কমে গেলে পরের দিন বাড়ি ফিরে এসে দেখেন বসতঘরটি পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ঘরে খাট ও সামান্য কিছু মালামাল ছাড়া কিছুই নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত রফিক আরও জানান, এই পর্যন্ত ঢালচরে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে ওই ঘরে বসবাস করছিলেন। তিনি কখনও অন্যের নৌকায় জেলে শ্রমিক আবার কখনও অন্যের গাভির দুধ বিক্রি করে সংসার চালান। ছেলেও একই কাজ করে। অভাবের সংসার তাদের। সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়া বসতঘরটি মেরামত করতে যে মালামাল ও টাকা লাগবে তা তার পক্ষে জোগানো অসম্ভব।
রফিকের ছেলে মো. শাকিলের ভাষ্য, ‘সেদিন আমরা বেঁচে ফিরতে এটা ভাবতে পারি নাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝের চর বাজার সংলগ্ন এলাকার প্রতিবন্ধী মো. মিলন জানান, বৃহস্পতিবার অতি জোয়ারের পানি তার বসতঘরে উঠে। তার স্ত্রী দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সাঁতার কেটে রাস্তায় চলে যান। পানির চাপে ভেঙে গেছে তার বসতঘর। পরে অন্যের একটি পরিত্যক্ত টং দোকানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত চারদিন ধরে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, তার দুই পায়ের সমস্যা থাকায় ভারি কাজ করতে পারছেন না। তাই তার ১২ বছরের ছেলে অন্যের নৌকায় জেলের কাজ করে কোনোরকম সংসার চালায়। স্ত্রী শীত মৌসুমে শুঁটকি পল্লিতে কাজ করেন। কিন্তু এখন স্ত্রীর রোজগার নেই। এরমধ্যে বসতঘর ভেঙে গেছে।
মো. মিলন বলেন, ‘বসতঘর তো না মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে আমাদের। ঘর ঠিক করার মতো টাকা নেই কাছে। পরিত্যক্ত দোকানেও বেশি দিন থাকতে পারবো না। এখন যদি সরকার আমাকে টাকা দেয় তাহলে বসতঘর মেরামত করতে পারবো, না হলে কোনো উপায় নেই।’
মিলনের স্ত্রী কুলুসুম বলেন, ‘শিশু ছেলের রোজগারে সংসার চলে আমাদের। ঘর ভেঙে যাওয়ায় একজনের পরিত্যক্ত একটি ৭-৮ হাতের দোকান ঘরে পাঁচজন থাকতেছি। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি।’
ওই ইউনিয়নের মাঝের চর বাজার এলাকার মো. ইউসুফ ও মো. রুহুল আমিন বলেন, ঢালচরে বহু বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ঢালচরের মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার সাত উপজেলায় আংশিক ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৫৩৬৫টি বসতঘর। এরমধ্যে ঢালচরেও অনেক বসতঘর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা আপাতত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করছি। পরবর্তীতে তাদের অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি