শনিবার বিকেলে ট্রেন্ট ব্রিজে শোয়েব বশিরের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন সিকান্দার রাজা। এর খানিকটা পর অলআউট হয়ে যায় দলও। একমাত্র টেস্টে মাত্র তৃতীয় দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হেরে যায় সফরকারী জিম্বাবুয়ে। সতীর্থরা যখন হতাশার সাগরে, অবিশ্বাস্য এক যাত্রা তখন কেবল শুরু সিকান্দার রাজার।
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তাকে লাহোরে পৌঁছাতে হবে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ফাইনাল খেলতে। ফাইনালের মতোই রাজার জার্নিটাও ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। তবে রাজা বলেই কি না। তিনি শেষ পর্যন্ত এলেন খেললেন এবং জিতলেন।
সপ্তাহ খানেক আগেই ইংল্যান্ড থেকে উড়ে এসে লাহোরের হয়ে খেলেছিলেন। দলকে নকআউটে উঠতে ভূমিকা রাখেন। ফাইনালটা তাকে বাদ দিয়েই ভাবনা চিন্তা ছিল লাহোর কালান্দার্স ম্যানেজমেন্টের। কারণ ফাইনালের দিনটি তো ইংল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে টেস্টের চতুর্থ দিন! তবে টেস্টটা দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন অভিযান শুরু করেন রাজা।
ক্রিকইনফোর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সিকান্দার রাজার নটিংহ্যাম থেকে লাহোরের অবিশ্বাস্য যাত্রার গল্প। নটিংহ্যাম থেকে এক বন্ধুর গাড়ীতে চড়ে তিনি বার্মিংহামের বিমানবন্দরের পথে ছুটলেন। যা ছিল তার জন্য লাহোরের বিমান ধরার জন্য নিকটতম বিমানবন্দর। সেখানে পৌঁছে বিজনেস ক্লাসের কোনো সিট না থাকায় ইকোনমি ক্লাসেই দুবাইয়ের পথে উড়াল দেন রাজা। সেখানে ছয় ঘণ্টার বিরতি।
দুবাইয়ে নেমে গাড়ি পথে আবার রওনা হন আবুধাবির উদ্দেশ্যে। লাহোরগামী সবচেয়ে আগের ফ্লাইট ছেড়ে যাবে সেখান থেকেই। গতকাল (রোববার) রাতে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যখন ফাইনালের টস করতে নামেন দুই দলের অধিনায়ক, তখনও মাঠে এসে পৌঁছাতে পারেননি সিকান্দার রাজা। লাহোর এয়ারপোর্টে নেমে তিনি তখন স্টেডিয়ামের পথে ছিলেন। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে একাদশে রেখেই ফাইনালের পরিকল্পনা সাজায়।
রাজাকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে কি না, এই অনিশ্চয়তায় দুটি একাদশ তৈরি রেখেছিল লাহোর। একটিতে ছিলেন রাজা, অন্যটিতে রাজার জায়গায় প্রস্তুত রাখা হয়েছিল সাকিব আল হাসানকে। বিমান ঠিক সময়ে লাহোরে আসায় এবং সব প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হওয়ায় রাজাকে নিয়েই মাঠে নামতে পারে লাহোর।
টসের মিনিট দশেক আগে বিমানবন্দরে নেমে পরে মাঠে আসা রাজাই শেষ পর্যন্ত হয়ে লাহোরের তৃতীয় শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক হয়ে উঠলেন। জমজমাট লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জেতাতে রাখলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ৭ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলে পিএসএলের রাজত্বটা ফিরিয়ে দিয়েছেন লাহোর কালান্দার্সের কাছে।
অথচ, ম্যাচের একটা পর্যায়ে কোয়েটার হাত থেকে ম্যাচ বের করা যাবে, এমন ভাবাই ছিল দুষ্কর। মোহাম্মদ নাইম আর আবদুল্লাহ শফিকের আউটের পর ম্যাচটা অনেকটাই চলে গিয়েছিল কোয়েটার নিয়ন্ত্রণে। ভানুকা রাজাপাকসাও হয়েছেন ব্যর্থ। তবে কুশাল পেরেরা এবং সিকান্দার রাজার ভাবনায় ছিল ভিন্ন কিছু।
শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য লাহোরের প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান। খুররম শেহজাদের ওভার থেকে ১৫ রান তোলেন দুই ব্যাটার। মোহাম্মদ আমিরের করা পরের ওভারের প্রথম বলে ৪ মারেন পেরেরা। এরপর পাকিস্তান পেসারের শেষ দুই বলে পেরেরার একটি করে চার ও ছয় নিয়ে হিসাব চলে আসে নাগালের মাঝে।
শেষ ওভারেও সহজ ছিল না সবকিছু। ৩ বলে দরকার ছিল ৮ রান। সিকান্দার রাজা এক ছক্কা এবং এক চারে মেলালেন সমীকরণ। এর আগে বল হাতেও সাফল্য পেয়েছিলেন রাজা। দলকে জিতিয়ে ব্যক্তিগত অর্জনও আছে। জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা অলরাউন্ডারের পুরস্কার।
ম্যাচ শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমি এখানে একটি দায়িত্ব পালন করতে এসেছি এবং খোদা না করুন, যদি আমরা এই ম্যাচে হেরে যেতাম, তবুও অন্তত আমার মনে হতো আমি আমার ভাইদের পাশে ছিলাম।
আমি জানি দল সত্যিই আমাকে এখানে চেয়েছিল, কারণ গত ২৪-৩৬ ঘণ্টায় আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য আমাদের স্বত্বাধিকারীরা ও অধিনায়কযা যা করেছেন, আমি জানি যে আমার দল কতটা মরিয়া হয়ে আমাকে এখানে চাইছিল। সত্যি বলতে, এটা অবিশ্বাস্য।’
আরও যোগ করেন, ‘কালকের আগের দিন ২৫ ওভার বোলিং করেছি (ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে), কালকে ২০ ওভার ব্যাটিং করেছি। ডিনার করেছি বার্মিংহামে, ব্রেকফাস্ট দুবাইয়ে, গাড়ীতে করে আবুধাবিতে পৌঁছে লাঞ্চ করেছি, বিমানে উঠেছি, এরপর আবার ডিনার লাহোরে। একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন এরকমই এবং আমি সত্যিই আপ্লুত ও ধন্য এই জীবনটা পেয়ে।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ