রাজবাড়ীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়ম খতিয়ে দেখতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশার।
অভিযানের সময় হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারে অনিয়ম, প্রতিদিনের ডায়েট চার্জ অনুযায়ী খাবার সরবরাহ না করা, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা, হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, চিকিৎসকদের দেরিতে আসা, রোগীদের খাবারে মিনিকেট/পাইজাম চাল দেওয়ার কথা থাকলেও মোটা চাল দেওয়াসহ বেশ কিছু অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুদক।
দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশার বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ৮০ জন রোগীর বিপরীতে মুরগির মাংস বরাদ্দ ছিল ২২ কেজি ২০০ গ্রাম। সেখানে আমরা মেপে ১৫ কেজি ২০০ গ্রাম পেয়েছি। ৭ কেজি মাংস কম পেয়েছি।
এছাড়াও রোগীদের খাবারের চার্টে প্রতিদিন প্রত্যেক রোগীকে ৩৫০ গ্রাম করে দুই বেলা ৭৫০ গ্রাম দুধ দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা ওয়ার্ড মাস্টারসহ রোগীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি এই হাসপাতালে কখনোই দুধ দেওয়া হয় না।
এছাড়াও সপ্তাহে একদিন খাসির মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা রোগীদের দেওয়া হয় না। আমরা রোগীদের সাথে কথা বলে এর প্রমাণ পেয়েছি। এছাড়াও রোগীদের খাবারে পাইজাম চাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা দেখতে পেয়েছি মোটা চাল দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও হাসপাতালের ঔষুধ ও লিলেন ধোলাইকরণের টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাগজপত্র আমরা যাচাই-বাছাই করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ছুটিতে থাকায় আমরা রেকর্ড দেখতে পারিনি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুই-এক দিনের মধ্যে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে আমাদের দপ্তরে পাঠাতে বলেছি। রেকর্ডপত্র পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে ও যেসব অনিয়ম উঠে এসেছে সেগুলো আমরা কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করব।
তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালে এসে দেখেছি এনালগ হাজিরা খাতায় ৩২ জন চিকিৎসকের নাম রয়েছে। এখানে ৩২ জনের মধ্যে ১৭ জনকে উপস্থিত পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি চারজন চিকিৎসক ইতোমধ্যেই বদলি হয়ে গেছে। তাদের নাম ও হাজিরা খাতায় উঠানো হয়েছে। আরেকজন ছুটিতে রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে- কয়েকজন চিকিৎসক হাসপাতালে এসেছেন, কিন্তু তারা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি। তাদের দাবি অনুযায়ী আমরা প্রকৃতপক্ষে ৫/৬ জন চিকিৎসককে হাসপাতালে পাইনি। এছাড়াও উপস্থিতের মধ্যে অনেকেই নির্ধারিত সময় থেকে দেরিতে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনিয়মের বিষয়গুলো বিস্তারিত প্রতিবেদন আকারে খুব শিগগিরই কমিশন বরাবর প্রেরণ করব। কমিশন পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জিয়াউল আহসান বলেন, আজকে দুদকের বিশেষ টিম সদর হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছে। তারা অভিযানে রান্নাঘরের ডায়েটে ৭ কেজি মাংস কম পেয়েছে ও চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি দেখতে পেয়েছে।
এছাড়াও তারা পথ্য ও লিলেন টেন্ডারের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য চেয়েছিল, কিন্তু হিসাবরক্ষক ছুটিতে থাকায় আমি সেটা দিতে পারিনি। আমি সামনের শনিবারের মধ্যেই এটা তাদের পাঠিয়ে দেব। তারা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে কমিশনকে জানাবে। এছাড়াও আমরা চেষ্টা করবো আমাদের যে অনিয়ম আছে তা দূর করার জন্য।
অভিযানে দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশার, উপ-সহকারী পরিচালক মো. কামরুল হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ