বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

ঢাকায় মিলছে বিষধর গোখরার দেখা, কিন্তু কেন?

বাংলা৭১নিউজ ঢাকা:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

গত চার মাসে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জনবহুল এলাকা থেকে তিনশো’র বেশি বিষধর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। মানুষের বাসার ভেতরে, গ্যারেজে এমনকি বহুতল ভবনের নয়তলায়ও সাপ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পদ্মগোখরা, রাসেল ভাইপার, খৈয়া গোখরা, রাজ কেউটের মতো বিষধর সাপও রয়েছে।

বাংলাদেশে বর্ষাকালে সাধারণত সাপ বেশি দেখা যায়। কারণ সাপ আবাসস্থল হিসেবে যেসব গর্ত তৈরি করে তাতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়লে সে আশ্রয়ের জন্য শুকনো স্থানের সন্ধানে উঁচু স্থান ও মানুষের বসতি বা ঘরে ঢুকে পড়ে।

কিন্তু ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় এ ধরণের বিষধর সাপ পাওয়ায় গবেষকদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, আবার কোনো কোনো গবেষক বিষয়টি স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ এসোসিয়েট মো. মিজানুর রহমান বলেন, জলাশয় ও খালবিল ভরাট করে মানুষ বাসস্থান তৈরি করায় সাপের বাসস্থান সংকট তৈরি হয়েছে। তাই সাপ মানুষের বাসায় ঢুকে পড়ছে।

ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব সাপগুলো উদ্ধার করছে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংস্থা।

এই সংস্থার আহ্বায়ক আদনান আজাদ জানিয়েছেন, গত চার মাসে ৩৫১টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি নির্বিষ সাপ এবং বাকিগুলো বিষধর সাপ।

ঢাকার বনশ্রী, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, বসিলা, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর, খিলগাঁও, কচুক্ষেত, মিরপুর-২, নিকেতন, উত্তরার উত্তরখান, দক্ষিণখান থেকে এখন পর্যন্ত বিষধর সাপগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাপ পাওয়া গেছে উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউকের ফ্ল্যাট প্রকল্প এলাকায়।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বনশ্রী এলাকা। এর মধ্যে নতুন করে খিলগাঁও-এ গত এক সপ্তাহ ধরে সাপ বেশি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ বলেন, “উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজউকের যে ফ্ল্যাট ওখানে সবচেয়ে বেশি সাপ পেয়েছি। সাততলা, নয়তলা থেকে সাপ উদ্ধার করেছি। এখানকার ১১টা বিল্ডিং থেকে সাপ উদ্ধার করেছি।”

এতো উঁচু ভবনে কিভাবে সাপ গেলো এমন প্রশ্নের জবাবে আজাদ বলেন, যেসব ভবনের উপরের ফ্ল্যাটে সাপ পাওয়া গেছে সেগুলোর প্রতিটি ভবনের গেইটের সাথে বাগান বিলাসের মতো লতানো গাছ রয়েছে, সেই গাছগুলো বেয়ে উপরে ওঠার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকেই হয়তো সাপ বেয়ে উঁচু ভবনে উঠেছে।

যেসব বিষধর সাপ পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে পদ্মগোখরা সাপই সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বলে জানান আজাদ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান জানান, “পদ্মগোখরা সাপ মূলত পানিপ্রেমী। নদী, জলাশয়, খাল-বিলে থাকতে পছন্দ করে। তবে, পানির নিকটস্থ ঝোপঝাড় ও গর্তেও এই সাপের দেখা মেলে। “

গত চার মাসে ঢাকায় পাওয়া সাড়ে তিনশ সাপের সংখ্যা নিয়ে স্থানীয় অনেকের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও সাপের কামড়ের ঘটনা তেমন দেখা যায়নি। তবে কেন হঠাৎ করে এতো বিপুল সংখ্যক বিষধর সাপের দেখা মিলছে এমন প্রশ্নে চট্টগ্রামের মেডিকেল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ এসোসিয়েট মো. মিজানুর রহমান জানান, মানুষ সাপের আবাসস্থল ধ্বংস করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। 

এদিকে ঢাকায় উদ্ধারকৃত সাপগুলো কোথায় রয়েছে এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আজাদ জানান, উদ্ধারকৃত সাপগুলো উদ্ধারের পর লোকালয় থেকে দূরে প্রাকৃতিক কোনো স্থানে অবমুক্ত করা হয়।

সাধারণত বনাঞ্চল যেখানে সাপ তার নিজস্ব পরিবেশ খুঁজে পায় এবং মানুষের সংস্পর্শে না আসে এমন স্থানে এসব সাপ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলা৭১নিউজ/এবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com