নেপালের সেনাবাহিনীর প্রধান অশোক রাজ সিগদেলের একটি টেলিভিশন বার্তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শান্তির আবেদন জানিয়ে তিনি যখন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তার পেছনে একটি প্রতিকৃতি সবার নজর কাড়ে। ছবিটি ছিল নেপালের সাবেক হিন্দু রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহের, যিনি অষ্টাদশ শতাব্দীতে নেপালকে একত্র করেছিলেন।
নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্প্রতি চরমে পৌঁছেছে। দুর্নীতি, বেকারত্ব, এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে, যাতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হাজার হাজার তরুণকে রাস্তায় নামিয়ে আনে। ক্ষুব্ধ জনতা সরকারি অফিস এবং রাজনীতিবিদদের বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেছেন, অস্থিরতা থামেনি।
তবে শুধু রাজপথের আগুনই নয় সেনাপ্রধানের ভাষণের পটভূমি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। ২০০৮ সালে এক দশকের মাওবাদী বিদ্রোহের পর নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। তাই সেনাপ্রধানের পেছনে সাবেক রাজার প্রতিকৃতি দেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটা কি বিশ্বের কাছে কোনো সংকেত দিচ্ছে? আরেকজন একে সবচেয়ে বড় অপটিক্যাল সংকেত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তৃতীয় একজন তো বলেই ফেলেছেন, এটা কি নেপালে রাজতন্ত্র এবং হিন্দু রাষ্ট্র ফিরে আসার ইঙ্গিত?
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এই ঘটনাকে দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ একে নিছকই কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী সংকটের মুহূর্তে এই পটভূমিকে উপেক্ষা করা কঠিন বলে মনে করছেন অনেকে।
বিগত ১৭ বছরে নেপালে ১৩টি সরকার পরিবর্তন হয়েছে, যা জনগণের মধ্যে ব্যাপক হতাশা তৈরি করেছে এবং বারবার বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এমনকি এই বছরের শুরুর দিকেও, নির্বাচিত নেতাদের প্রতি হতাশা বৃদ্ধির কারণে অনেকেই রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন।
অলির পদত্যাগ এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে, শাহ রাজবংশের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও নেপাল সেনাবাহিনী দীর্ঘকাল ধরে পৃথ্বী নারায়ণ শাহকে শ্রদ্ধা করে। অসংখ্য সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং স্থান তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এমনকি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সিগদেল যখন আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন, তখনও একই প্রতিকৃতি উপস্থিত ছিল। তবে চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে এই ছবির উপস্থিতি এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ