দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও ২১টি হল সংসদ নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। ৩৩ বছর পর এ নির্বাচনের আয়োজন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবার জাকসুর ২৫টি পদে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৮ জন প্রার্থী এবং হল সংসদসহ মোট প্রার্থী ৪৭৫ জন প্রার্থী। নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৯৭ জন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা সবার।
শীর্ষপদে এগিয়ে আছেন যারা :জাকসু নিবাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ৮টি প্যানেল এবং স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। নির্বাচনে একক আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন না কোনো প্রার্থী বলে মনে করছেন ভোটাররা। জাকসুতে সব থেকে বেশী আলোচনায় রয়েছেন চার ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের শেখ সাদী ও শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষাথী জোট’ থেকে আরিফউল্লাহ, বাসছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল, ‘স্বতন্ত্র শিক্ষা সম্মিলন’ প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল হতে ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি। জুলাই আন্দোলনে তিনিও জাবি ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রদল সভাপতি। জুলাই আন্দোলনের ভূমিকার কানণে দলীয় পরিচয়ের বাইরেও তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
‘সমন্বিত শিক্ষাথী জোট’র ভিপি প্রার্থী আরিফুউল্লাহ। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সদস্য। গত ৩৫ বছর শিবির প্রকাশ্যে জাবিতে রাজনীতি করতে না পারলেও গত বছর শিবির প্রকাশ্যে আসে। ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী। বিগত জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতুও বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি গণ-অভ্যুত্থানে জাবি ক্যাম্পাস থেকে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ছিলেন।
বুথ এবং ভোট গ্রহণ পদ্ধতি: বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ টি আবাসিক হল ভোটকেন্দ্র এবং ২১টি ভোটকেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে । তবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রচলিত ‘বেল’ পদ্ধতির ব্যালট থাকবে না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভোটাররা নির্বাচনী কর্মকর্তার সহায়তায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনী ব্যালট পেপার ছাপা হয়েছে ভোটগ্রহণের দিন আজ সকালে। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দুটি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য প্রফেসর মাফরুহী সাত্তার বলেন, একজন ভোটার কোনো কারণে ব্যালট পেপারে ভুল করার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জানালে তাঁকে নতুন ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এ কারণে কিছু অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট সরবরাহকারীরা ১০০টি ব্যালটে এক সেট হিসাব করেন। এ কারণে সেট হিসেবে ব্যালট দেওয়ায় কিছু ব্যালট বেশি আনতে হয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। প্রার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ব্যালট পেপার তিন পৃষ্ঠা, দুই পৃষ্ঠা ও এক পৃষ্ঠা ছাপানো হয়েছে।
ভোট কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা
কেন্দ্রের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে ২১টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের ১ হাজার ২০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে। তাঁদের অধিকাংশই ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করবেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ নজরদারি করা হবে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করবেন। দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন।
বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ
বহিরাগতর বা সাবেক কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ১০-১২ তারিখ ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আবাসিক হলে অবস্থিত সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আগামী ১০-১২ তারিখ পযন্ত আবাসিক হলসমূহে এবং ক্যাম্পাসে প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অতিথিসহ যেকোনো ধরণের বহিরাগত ব্যক্তি অবস্থান করতে নিষেধ রয়েছে।
নির্বাচনকালীন পর্যবেক্ষক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকগণের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং পেশাগত পরিচয়পত্রসহ বহন করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন চলাকালীন জাকসু নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহন ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা আশা রাখছি যে একটা উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা নির্বাচন শেষ করতে পারবো।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ