শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ

নুরাল পাগলার দরবারে হামলায় ১ জনের মৃত্যু

রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় রাসেল মোল্লা (২৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শরিফ ইসলাম এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দফায় দফায় দরবারে হামলা করে একদল লোক। তাঁরা শরিয়ত–পরিপন্থীভাবে দাফনের অভিযোগ তুলে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেন। উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একদল লোকের এই হামলায় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। সেখানে পুলিশের দুটি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

নিহত রাসেল মোল্লা গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব তেনাপচা ঝুটু মিস্ত্রি পাড়ার বাসিন্দা আজাদ মোল্লার ছেলে। তিনি নুরাল পাগলার দরবারের খাদেম ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে অনেক বছর আগে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন নুরুল হক। গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যের কারণে মারা যান নুরুল হক। ওই দিন রাতে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় আস্তানায় তাঁর লাশ দাফন করেন ভক্তরা। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কবর সমতল করাসহ কয়েকটি দাবি জানায় স্থানীয় আলেম সমাজ।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি ও নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্যদের কয়েক দফায় বৈঠক হয়। তবে কবর নিচু না করায় দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি।

তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর সমতলসহ বিভিন্ন দাবি জানায়। অন্যথায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পরে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়।

তবে অভিযোগের বিরুষে নুরাল পাগলার ছেলে মেহেদী নূর জিলানী গত ২ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, তাঁর বাবার নির্দেশ মতো কিছুটা উঁচু করে ইসলামের বিধান মেনে দাফন করা হয়েছে। তিন থেকে চার ফুট উঁচু হতে পারে। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে। কবর নিচু করতে ভক্ত ও খাদেমদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জুমার নামাজের পর আনসার ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। বেলা দুইটার পর থেকে আনসার ক্লাবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন শত শত মানুষ। বেলা আড়াইটার দিকে হাতুড়ি, শাবল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক মিছিল নিয়ে আসে।

এ সময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে লাঠিসোঁটা, হাতুড়ি মঞ্চে জমা দিতে বলা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে মঞ্চে বক্তব্য চলাকালে কিছু লোক পুলিশের ওপর হামলা করে দুটি গাড়ি এবং ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করেন। সংঘর্ষে পুলিশের ছয় সদস্য আহত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বেলা তিনটার দিকে মঞ্চ থেকে ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা জালাল উদ্দিন প্রামাণিক, সদস্যসচিব বিএনপি নেতা আইয়ুব আলী খান সবাইকে সমাবেশে থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু উত্তেজিত লোকজন মিছিল নিয়ে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা করেন। ভেতর থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন নুরাল পাগলার ভক্তরা।

 ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়। এ সময় কিছু লোক দরবারের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেন এবং মালামাল লুটপাট করেন। একপর্যায়ে বিকেল পাঁচটার দিকে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শরিফ ইসলাম জানান, রাসেল মোল্লা (৩০) নামের একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুরে পাঠানো হয়। খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমান বলেন, হাসপাতালে আসার পরে রাসেল মোল্লা নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী রয়েছে। হামলার ঘটনায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা আমাদের জানা নেই।’

ইউএনও মো. নাহিদুর রহমান বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দরবার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা সতর্ক আছেন। হতাহতের সংখ্যা জানা না থাকলেও শুনেছেন একজন মারা গেছেন। তবে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

বাংলা৭১নিউজ/এবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com