চলতি বছরেই কোয়াড সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতে আসার কথা ছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কয়েক মাস আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। সে সময় ট্রাম্প রাজি হয়েছিলেন ভারতে আসতে। কিন্তু তাঁর সেই সফর বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে খবর মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইম্সের (এনওয়াইটি)।
ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প এ বছর ভারতে না-আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোয়াড সম্মেলনে তিনি হয়তো যোগ দেবেন না। যদিও ওয়াশিংটন বা নয়াদিল্লির তরফে এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং আমেরিকা— চার দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী কোয়াড। প্রতি বছর কোনও না কোনও সদস্য রাষ্ট্রে এই গোষ্ঠীর বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ বছর কোয়াডের সম্মেলন হওয়ার কথা ভারতে। সেই মতো সদস্য দেশগুলির প্রধানদের কাছে মোদীর আমন্ত্রণ গিয়েছে। গত জুনে নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, কোয়াডের জন্য মোদীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প। যথাসময়ে তিনি ভারতে আসবেন।
কিন্তু ট্রাম্পের সূচি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, এমন সূত্র উল্লেখ করে শনিবার এনওয়াইটি জানিয়েছে, ভারতে আসার কোনও পরিকল্পনা এখন আর নেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের। এ ছাড়া এই রিপোর্টে মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে একটি ফোনালাপের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। গত জুনে ৩৫ মিনিটের সেই ফোনালাপ থেকেই নাকি বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর থেকেই মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কে শীতলতা বেড়েছে।
কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল ৩৫ মিনিটের ফোনালাপে?
জুন মাসে জি৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডায় গিয়েছিলেন মোদী এবং ট্রাম্প। সেখান থেকে দ্রুত ওয়াশিংটনে ফিরতে হয়েছিল ট্রাম্পকে। রিপোর্টে দাবি, সেই সময়েই মোদীকে ফোন করে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
কানাডা থেকে দেশে ফেরার আগে মোদী যাতে এক বার ওয়াশিংটনে যান, তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেই অনুরোধ রাখতে পারেননি। জানিয়েছিলেন, দেশে তাঁর অন্য কাজ আছে, যা আগে থেকে নির্ধারিত। সেগুলি তিনি বাতিল করতে পারবেন না। ১৭ জুনের সেই ফোনালাপে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।
পহেলগাঁও হামলার পর মে মাসে ভারত এবং পাকিস্তান যখন সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল, তখন থেকেই ট্রাম্প দাবি করছেন, তিনি এই সংঘর্ষ থামিয়েছেন। নয়াদিল্লি প্রথম থেকে এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৭ তারিখ ফোনেও দুই দেশের সংঘর্ষে মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন ট্রাম্প। যুদ্ধ থামাতে পেরে তিনি গর্বিত বলে দাবি করেছিলেন।
এমনকি, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ভারত যাতে ট্রাম্পের নাম মনোনয়ন করে, তার জন্য মোদীকে বলেছিলেন। কিন্তু মোদী তাতে রাজি হননি। ভারত এবং আমেরিকার সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক মতবিরোধে মোদী-ট্রাম্পের সেই ফোনালাপ অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
কিছু দিন আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়েছিলেন। এনওয়াইটি রিপোর্ট বলছে, সেই মধ্যাহ্নভোজেই মোদীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
ভারতীয় আধিকারিকেরা ভেবেছিলেন, মুনিরের সঙ্গে তাঁদের হাত মেলাতে বাধ্য করা হতে পারে। তা-ও আমন্ত্রণ গ্রহণ না-কারর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন