স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিতের আয়োজনে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ২০১২ সালের আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালীতে অবস্থিত নুহাশ পল্লীতে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, শনিবার সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশ পল্লীতে কোরআন তেলাওয়াত করেন। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেন।
শনিবারের কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগের দিন হুমায়ূন আহমেদের দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতসহ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন নুহাশ পল্লীতে এসে অবস্থান নেন।
এছাড়া কথা সাহিত্যিকের পরিবারের লোকজন, ভক্ত, বন্ধুরা কবর জিয়ারত ও মিলাদে যোগ দেন। দুপুরে মিলাদ মাহফিল শেষে এতিম শিশু ও শিক্ষার্থীদের খাদ্য বিতরণ করা হয়। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
বুলবুল আরো জানান, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী শাওন, ছেলে নিষাদ, নিনিতসহ নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা কর্মচারি এবং হুমায়ূনভক্ত ও দর্শনার্থীরা হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং কবরের পাশে ফাতেহা পাঠ ও দোয়ায় অংশ নেন।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্পসাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর।
হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন অনেকদিন। লেখালিখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে যান।
স্বাধীনদেশে ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই হুমায়ূন আহমেদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, মাতাল হাওয়া, শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, গল্প, কবি, লীলাবতী, গৌরীপুর জংশন, এইসব দিনরাত্রি ইত্যাদি।
তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। টিভি নাট্যকার ও নির্মাতা হিসেবেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়।
তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তি বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ। কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ