বারবার অজ্ঞান হয়ে যেত। বুক ধড়ফড় করত। শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। চিকিৎসা না পেলে বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না সামিয়ার। পোশাক শ্রমিক বাবার পক্ষে হৃদযন্ত্রের জটিল অস্ত্রোপচারের খরচ বহন সম্ভব ছিল না। অসহায় হয়ে মেয়ের মৃত্যু দেখতে অপেক্ষায় ছিলেন বাবা-মা।
কিন্তু জীবনের গল্পটা অন্য রকমই হলো। একজন পুলিশ কর্মকর্তার মানবিক হস্তক্ষেপে ১২ বছরের সামিয়া এখন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে। চোখেমুখে নতুন জীবনের আলো, বুকভরা স্বপ্ন আর একরাশ কৃতজ্ঞতা।
সামিয়ার জন্ম হয় হৃদযন্ত্রের ছিদ্র নিয়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। হৃদযন্ত্রের ভালভ ঠিকমতো কাজ করছিল না। ফুসফুসে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা আর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া তার নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল।
২০১৯ সালেই চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু সামিয়ার বাবা শামীম হোসেনের আয়ে শুধু ঘরের খরচই কোনো মতে চলে। ধার করে মেয়ের কিছু পরীক্ষা করালেও চিকিৎসা আর হয়নি। দারিদ্র্য আর অসহায়তা মিলে পরিবারের কাছে মেয়েটি যেন মৃত্যুপথের যাত্রী হয়ে উঠছিল।
এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নজরে আসে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামানের। পেছনে না তাকিয়ে মানবিক সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কোনো প্রচার নয়, নিঃশব্দে সামিয়াকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন।
এসপির নির্দেশে গত ২৩ জুন সামিয়াকে ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয়। নানা পরীক্ষার পর ৮ জুলাই সামিয়ার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। দীর্ঘ সাত ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসকেরা বলেন, ‘অপারেশন সফল।’
সেই দিনটিকে ‘পুনর্জন্ম’ বলেই মনে করেন সামিয়ার বাবা। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে তিনি বলেন, “চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যু দেখতে হচ্ছিলো। আজ সুস্থ সামিয়াকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এসপি আনিসুজ্জামান স্যার ও তার স্ত্রী আমাদের কাছে ফেরেশতার মতো।”
শুধু অস্ত্রোপচার নয়, ওষুধ, খাবার, এমনকি সামিয়ার পড়াশোনার দায়িত্বও নিয়েছেন আনিসুজ্জামান দম্পতি। সব খরচ ব্যক্তিগতভাবে বহন করেছেন তারা।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. গোলাম সরোয়ার নিয়মিত খোঁজখবর রেখেছেন সামিয়ার পরিবারের। তিনি বলেন, “এসপি স্যার ডেঙ্গুতে অসুস্থ ছিলেন। তবু সামিয়ার চিকিৎসার সব খবর রেখেছেন। প্রচারের আলোয় আসতে চান না তিনি।”
সামিয়ার নিজের কথায়, “আমি মরেই যেতাম। আল্লাহ তায়ালা এসপি স্যারকে পাঠিয়েছেন আমাকে বাঁচাতে। এখন আমি আবার স্কুলে যাব, লেখাপড়া করব, বড় কিছু হব।”
এসপি আনিসুজ্জামান বিসিএস ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এ বছরের শুরুতে রাজশাহী থেকে ঢাকা জেলায় যোগ দিয়েছেন। এলাকায় তার মানবিকতার কথা এখন মুখে মুখে।
এদিকে গ্রামে সামিয়াকে দেখতে ভিড় করছেন প্রতিবেশীরা। তাদের একজন বলেন, “যেখানে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুই ছিল নিশ্চিত, সেখানে এভাবে ফিরে আসা অলৌকিক না হলে কী?”
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ