সারা দেশে একই সময়ে কেন বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হল? এটা কি পূর্বপরিকল্পিত? প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। কেন জুন মাসকেই বেছে নেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন আদালতের।
হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের উদ্দেশে বলে, “হঠাৎ করে কেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশি শনাক্ত করার কাজ শুরু হল? এর পিছনে কারণ কী? সব রাজ্যের জন্য কেন জুন মাস বেছে নেওয়া হল?” দুই বিচারপতির বেঞ্চ আরও বলে, “ধরুন, পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযানে যায়। একই সময়ে তল্লাশি শুরু হতে পারে। তার পিছনে একটি কারণ থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কী কারণ রয়েছে? পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই কি এটা করা হচ্ছে? অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বলার জন্য আটক করা হচ্ছে।”
কেন্দ্রের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি চক্রবর্তীর মন্তব্য, “আমি অনুরোধ করব এই বিষয়টি জানানো হোক। কারণ, এটি না হলে ভুল বার্তা যেতে পারে। কোনও ভুল পদক্ষেপ হতে পারে। যেমন অভিযোগ উঠছে, বাংলায় কথা বলার জন্য আটক করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।”
তখন কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, পহেলগাঁও হামলার পরে সন্দেহজনক গতিবিধি দেখলে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। বাংলা বলেন, এমন সবাইকে আটক করা হয়নি। সন্দেহবশত ১৬৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ওই ৫ জন নিজেরাই স্বীকার করেছেন তাঁরা বাংলাদেশি।
অন্য দিকে মামলায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ তোলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তী। মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর সওয়াল, এই মামলা কলকাতা হাই কোর্ট শুনতে পারে না। একই বিষয়ে দিল্লি হাই কোর্টে আগেই মামলা দায়ের হয়েছে। সেখানে মামলা বিচারাধীন। একই ব্যক্তিদের নামে এখানেও মামলা দায়ের করেছেন মামলাকারী। আদালতকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বলেও হাই কোর্টে জানান কেন্দ্রের আইনজীবী।
কেন্দ্রের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে মামলাকারীর আইনজীবীকেও ভর্ৎসনা করে আদালত। গোটা বিষয়টি আদালতে হলফনামা দিয়ে জানানোর জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। তার পরেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানায় হাই কোর্ট। মামলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে কেন্দ্রকে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৪ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
এই মামলার রাজ্যের তরফে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এজলাসে বলেন, “মামলায় খুবই গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলায় কথা বলার জন্য অনেককে হেনস্থা করা হচ্ছে। একই মামলা দিল্লি হাই কোর্টে বিচারাধীন থাকলে কিছু বলব না। কিন্তু মূল বিষয়টি হল কে ভারতীয় নাগরিক এবং কে নন, কী ভাবে নির্ধারণ করা হল? কত জনকে আটক করা হয়েছে এবং কত জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, তথ্য দিয়ে জানাক কেন্দ্র।” কেন্দ্রের ওই আইনজীবীর উদ্দেশে কটাক্ষ করে কল্যাণ বলেন, “এর পরে হয়তো দ্বিবেদী এবং ত্রিবেদীরাই থাকবে। আমাদের বলা হবে চলে যেতে।”
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: আনন্দবাজার অনলােইন