ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ (ইরনা) দাবি করেছে, ইসরায়েলের হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মূল লক্ষ্য ছিল তার পাশেই অবস্থিত একটি সামরিক প্রযুক্তি পার্ক, যেটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গোয়েন্দা ও প্রযুক্তি কার্যক্রমে ব্যবহার করে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সরোকা মেডিকেল সেন্টার অবস্থিত ইসরায়েলের বিয়ার শেভা শহরে। হাসপাতালটি যেখান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত পায়, তার খুব কাছেই অবস্থিত গাভ-ইয়াম নেগেভ টেকনোলজি পার্ক—যেটিকে এই হামলার মূল লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইআরএনএ।
সংস্থাটি বলেছে, ‘এই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিশাল কমান্ড ও গোয়েন্দা ঘাঁটি (আইডিএফ, সি৪আই) এবং তাদের সামরিক গোয়েন্দা শাখার ক্যাম্পাস, যা সরোকা হাসপাতালের পাশেই গাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্কে অবস্থিত।
প্রযুক্তি পার্কটির ওয়েবসাইটে একে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে উন্নত গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইডিএফের সি৪আই শাখার ক্যাম্পাসের ঠিক পাশে অবস্থিত।
উল্লেখ্য, সি৪আই ডিরেক্টরেট হলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি এলিট প্রযুক্তি ইউনিট, যারা কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কম্পিউটার ও ইন্টেলিজেন্স—এই পাঁচটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করে। ওয়েবসাইটটি আরো জানায়, এই পার্কে আইডিএফের অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ, বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট, হাইটেক শিল্প, বিনিয়োগকারী ও গবেষকদের মধ্যে সংযোগ তৈরি হয়।
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের তরফ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরানের পক্ষ থেকে এটা ছিল একটি প্রতিশোধমূলক হামলা, যার লক্ষ্য ছিল সামরিক কাঠামো, যদিও তার কাছাকাছি অবস্থিত বেসামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের রামাত গান শহরে আঘাত হানলে বিস্ফোরণের আশপাশের প্রায় সবদিকে ভবন ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার কিছু পর তেল আবিবের পূর্বদিকে অবস্থিত এ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে।
বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের ভবনের সামনের অংশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং উঁচু ভবনের জানালাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ অনেক ভবনের জানালা দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ বহু গাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং গোটা এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ধুলা ও ধাতব টুকরো।
হামলার পরপরই উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি মোড় বন্ধ করে দেয় এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ শুরু করে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল ইরানের ছোড়া একটি বড় ধ্বংসাত্মক হামলার অংশ, যার আওতায় দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ার শেভার ওই হাসপাতাল এবং তেল আবিবের দক্ষিণের শহর হোলোনেও হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জরুরি সাড়া দলের সদস্য গোলান ল্যান্ডসবার্গ জানান, ‘আমরা বিভিন্ন হামলার স্থানে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছি। আমি রামাত গান এলাকায় এসেছি কারণ এটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং এখানে হতাহতের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি ছিল। আমাদের মতে, এই এলাকাটিই এ দফার হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা নিরাপদ কক্ষে ছিলেন, তারা অক্ষত রয়েছেন। অ্যাপার্টমেন্টে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তবে নিরাপদ কক্ষগুলো সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সেগুলো প্রাণ রক্ষা করেছে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই আতঙ্কে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। এখনও উদ্ধার তৎপরতা ও ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার কাজ চলছে। ইসরায়েল এখনো পুরো হামলার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র : সিএনএন
বাংলা৭১নিউজ/এবি