বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন

ফরিদপুরে ভাঙন বেড়েছে পদ্মায়, আতঙ্কে ভিটে ছাড়ছে মানুষ

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে নদী পাড়ের বেশ কয়েকটি রাস্তা এরইমধ্যে ভেঙে গেছে। ভাঙনে অনেকেই বসতভিটা হারাতে বসেছেন। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে ভিটেমাটি ফেলে অনেকেই তাদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নজরদারি ও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সব মিলিয়ে হঠাৎ করে পদ্মার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভাঙন। গত প্রায় ১৫ দিনে ভাঙনের শিকার হয়েছে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার শয়তান খালি ঘাট, খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী, গোপালপুর ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।

এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে সদরপুর উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের মুন্সীরচর, পিঁয়াজখালির চর, আকোট, আকোটের চর এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকা। এছাড়াও ছলেনামা ও খোকারাম সরকারের ডাঙ্গীতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর ঝুঁকিতে রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দুটি উপজেলার কমপক্ষে ৬০-৭০টি পরিবারকে তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে খোলা জায়গায় বসবাস করছে। অনেকে নদীর পাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। অনেকে আবার বাড়ির চাল খুলে অন্য জায়গায় রাখলেও খুঁটি ও বেড়া লাগিয়ে রেখেছেন। যদি ভাঙন থেমে ভিটেটুকু টিকে থাকে সেই আশায়।

সদরপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, নুরুদ্দিন সরদারকান্দি, কাচিকাটা গ্রাম, নন্দলালপুর, ফকির কান্দি, তালপট্টির চর, কাড়ালকান্দি, জঙ্গিকান্দি, জামাল শিকদার কান্দি এবং চরমানাইর ইউনিয়ন ও চরনাসিরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী ঘাট, কাজীরসুরা, দূর্বারটেক, মফিজদ্দিনের কান্দি, হাফেজ কান্দি, রাড় চরগজারিয়া ও গিয়াস উদ্দীন মুন্সীর কান্দি গ্রাম ভাঙছে।

চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রাম, সদর ইউনিয়নের টিলারচর ও এমপি ডাঙ্গী গ্রাম, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চরকালকিনিপুর, চরমির্জাপুর, চরতাহেরপুর, চরকল্যাণপুর, দিয়ারা গোপালপুর গ্রামেও পদ্মা নদীর ভাঙন বেড়েছে।

স্থানীয় কাচিকাটা গ্রামের বাসিন্দা রহিম শেখ বলেন,পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। নদীর পাশেই আমার বাড়ি। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় ঘরের কাছে চলে এলে বাধ্য হয়ে ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি।

আকোটের চর ইউনিয়নের খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী গ্রামের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আকিদুল শেখ জানান, সারা বছর পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। আর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়। প্রভাবশালীদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনের খেসারত দিচ্ছে এলাকাবাসী।

শয়তান খালি ঘাট এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, গত প্রায় ১৫ দিনে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙনও বাড়ছে। তবে ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেই। ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বসতভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে চরভদ্রাসনের চর ঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা বলেন, গত প্রায় ১৫ দিনে এ ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫টি পরিবারের ভিটেমাটি, ঘর-বাড়ি পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নে অন্তত ৩ হাজার বিঘা বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

সদরপুরের আকোটের চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন, পদ্মার ভাঙন তীব্র আকারে বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষ।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা খাতুন বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ভাঙনের স্থানগুলোতে নদীর গভীরতা অনেক বেশি। যার কারণে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভাঙন রোধে আমরা কাজ করছি। আমাদের একটি টিম সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেছে। টেকসই স্থায়ী প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com