কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-খুরুশকুল সংযোগ সেতু। নির্মাণশৈলীর কারণে উদ্বোধনের পর থেকেই সেতুটি পর্যটনের অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে সেতুর দু’পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুতে জ্বলে না কোনো বাতি। সন্ধ্যা হলেই আধুনিক সেতুটিতে তৈরি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ।
স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকে সেতুর পরিবেশ। দৃষ্টিনন্দন সেতুতে বৈকালিক ভ্রমণে যান পর্যটকসহ স্থানীয়রা। সন্ধ্যার পর শীতল বাতাসে পরিবেশটা খুবই স্নিগ্ধ। কিন্তু বাতি না থাকায় ভয়ে কেউ সেখানে থাকতে চান না। সেতুতে বাতি আছে, কিন্তু আলো জ্বলে না। হেঁটে পারাপারকারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হন। জনশ্রুতি আছে, রাতে বাতিহীন সেতুতে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। তারাই নানা অপরাধমূলক কাণ্ড করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, উদ্বোধনের দিন সড়ক বাতি জ্বললেও পরে সেতুর বাতি নিরাপত্তার স্বার্থে খুলে নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে সন্ধ্যার পরই অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সেতু দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে প্রায় ছিনতাই ও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডি সূত্র জানায়, সদরের পৌরসভা ও খুরুশকুলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে স্থানীয়দের দীর্ঘ প্রত্যাশিত ছিল সেতুটি। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় স্বপ্নের কক্সবাজার-খুরুশকুল সেতুর নির্মাণ।
পুরো কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর। সে বছরের ১১ নভেম্বর সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ সেতুতে ৩টি ৬৫ মিটার গভীরে স্প্যান এবং ৫০ মিটারের ১০টি স্প্যান রয়েছে। এত দীর্ঘ সেতু আগে কখনো দেশীয় নকশায় তৈরি হয়নি দাবি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের।
সিএনজি চালক মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, চৌফলদন্ডী ও খুরুশকুলের দুটি ব্রিজ তৈরি হওয়ায় মহাসড়কের চেয়ে সদরের সঙ্গে ঈদগাঁও উপজেলার দূরত্ব কমেছে প্রায় ২০ কিলোমিটার। ফলে চৌফলদন্ডী, পোকখালী, জালালাবাদ, ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর ইউনিয়নের লোকজন চিকিৎসা কিংবা জরুরি যেকোনো কাজে এ সড়কটিই ব্যবহার করছে। অনেকের কাজ শেষ করে ফিরতে রাতও হয়। কিন্তু খুরুশকুলের নতুন ব্রিজটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে বিধায় অনেক সময় ভয় নিয়ে পারাপার করতে হয়।
খুরুশকুলের বাসিন্দা মুবিনুল হক বলেন, নতুন ব্রিজটি কক্সবাজার পৌঁছাতে খুরুশকুলবাসীর এক ঘণ্টার পথকে ১০মিনিটে এনে দিয়েছে। তবে শহর থেকে বাড়ি ফিরতে অনেকেরই রাত হয়। পুরো সেতু ও সংযোগ সড়কজুড়ে কোনো লাইট না থাকায় পুরোটা পথ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। এতো টাকা ব্যয়ে গড়া সেতুতে বাতি থাকলেও জ্বলে না, এটাই দুঃখজনক।
খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যা হলেই পুরো সেতু ও সড়কটি অন্ধকার থাকে। ফলে সেতুতে ওঠার পর থেকেই ছিনতাই আতঙ্কে থাকতে হয় পথচারীদের। কর্তৃপক্ষের উচিত সড়ক বাতি নিশ্চিত করে সেতুর সৌন্দর্য ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, শহর থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে বাঁকখালী নদীতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ সেতুর ওপারে কয়েকটি জলাভূমি ও ঘের আছে। সেতুটি শুধুমাত্র দু’পাড়ের সংযোগ ঘটায়নি, নতুন করে সংযোগ স্থাপন করেছে খুরুশকুলের অর্থনীতিতে। আশপাশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দারুণ সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি রাতে আলোকিত না হলে তা আমজনতার কোনো উপকারেই আসবে না।
এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, ব্রিজটিতে দেওয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মূল্যবান তারগুলো চুরি হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে মাদকাসক্তরা এ কাজটি করেছে। নিচে আবারো তার লাগালে সেগুলোও চুরির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিকল্প হিসেবে উপরে লাইন টেনে লাইট লাগানোর প্রকল্প এরইমধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে। পাস হয়ে এলেই কাজ শুরু হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি