বাংলা৭১নিউজ, খুলনা: খুলনার বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা উপজেলার সাপ্তাহিক হাটে এক গ্রাম তিলও উঠছে না। কৃষকের ঘরে বীজ হিসেবেও এক মুঠো তিল নেই। মৌসুমের শুরুতে এবং শেষে অতি বৃষ্টিকেই দায়ী করেছেন কৃষকরা।
বৃষ্টির কারণে মাটিতে যেমন তিলের চারা গজায়নি, তেমনি শেষ মুহূর্তে ক্ষেতে নষ্ট হয়েছে এসব উপজেলার একমাত্র অর্থকরী ফসল তিল। অতি বৃষ্টিতে জেলায় এবার ৯০ শতাংশ তিলের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার তিল ক্ষেতেই পচেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় অন্যান্য বছর প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়। এবার ১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তাও পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ায়।
স্থানীয় সূত্র বলছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের তেঁতুলতলা, ঝড়ভাঙ্গা, রাঙ্গেমারি, শৈলমারী, সদর ইউনিয়নের হাটবাটী, হেতালবুনিয়া, হোগলবুনিয়া, কিসমত ফুলতলা, বসুরাবাদ, মাইলমারা, ভেন্নাবুনিয়া, গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের দেবীতলা, বয়ারভাঙ্গা, আন্ধারিয়া, আমতলা, ঢেউয়াতলা, কায়েমখোলা ও বরণপাড়া, পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর, আগরঘাটা, হাটবাড়ী, জিলবুনিয়া, দেলুটি, মধুখালী, ডুমুরিয়া উপজেলার কালিকাপুর, ফুলবাড়িয়া, শরাফপুর, তালতলা, গজেন্দ্রপুর, ধানিবুনিয়া, পেড়িখালী ও হাজীবুনিয়া গ্রামে তিলের আবাদ বেশি হয়।
কৃষি কর্মকর্তা জানান, এবার ডুমুরিয়া উপজেলার চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উঁচু স্থান এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকায় পাইকগাছা উপজেলায় তিলের কাঙ্খিত উৎপাদন হয়।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবায়েত আরা জানান, এখানকার চাষিরা বিলম্বে আমনের আবাদ করায় ধান কাটতে দেরি হয়ে যায়। একই জমিতে তিলের আবাদ হয়। কৃষকদের তিল চাষ সম্পর্কে অবহিত করতে ২১০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিল আবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর উপজেলার চাষীদের পাট চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বছরে সাড়ে ৮ হাজার একর জমিতে তিল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত মৌসুমে ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। এ মৌসুমে ৭০০ হেক্টর জমিতে ২৯৪ মেট্রিক টন তিল উৎপাদন হয়।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান, আব্দুল গফফার গাজী, মছিরউদ্দিন বিশ্বাস জানান, এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ঋণী হয়ে পড়েছে।
বয়ারভাঙ্গা গ্রামের তিল চাষী কাকন মল্লিক জানান, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করা হয়। বিঘা প্রতি তার ব্যয় হয়েছে দেড় হাজার টাকা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তিল ক্ষেত পচে গেছে। ফলে এ বছর লোকসানের ঘানি টানতে হবে।
হাটবাটি গ্রামের চাষি সুনীল বাছাড় জানান, এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করা হয়। বিঘাপ্রতি ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা। তিল কাটার মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে তিল পচে গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় দুই হাজার তিল চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মার্চে কৃষকরা ওই জমিতে ঢেঁড়শ, করলা ও মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করেছে। এ উপজেলায় ২০১৪ সালে ১ হাজার ৬১০ হেক্টর, ২০১৫ সালে ৬৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এবার ৬৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস