চলতি বছর বর্ষা না আসতেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে ভোলার চরফ্যাশনের তেঁতুলিয়া নদী। নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে নিঃস্ব হচ্ছে বহু পরিবার।
ভাঙন কবলিত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চরফ্যাশন উপজেলার নীল কমল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চর নুরুল আমিন গ্রামের কাশেম মিয়ার বাজার থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। তাই দ্রুত সিসি ব্লক দ্বারা শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন রোধের দাবি তাদের।
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় ৩-৪ বছর ধরে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নীল কমল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চর নুরুল আমিন গ্রামের কাশেম মিয়ার বাজার থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে ওই এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গ্রামের তাহেরা খাতুন জানান, তার বসতভিটা দুইবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় এই বসতভিটা করেছেন। কিন্তু বর্তমানে নদী আবার ভাঙতে শুরু করেছে। নিজের জমি-জমাও নেই, তাই বসতঘরটি ভেঙে কোথায় নিয়ে যাবেন সেই চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
একই গ্রামের রাহিমা বেগম জানান, তার বসতভিটা তেঁতুলিয়া নদীর গর্ভে চলে গেছে। বর্তমানের স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, তার স্বামী মো. আরিফ রিকশাচালক। স্বামীর আয়ে তাদের সংসার চলে। তার স্বামী যা আয় করে তা দিয়ে পরিবারের সবার কোনো রকম তিন বেলা খাবার জুটে। কোনো সঞ্চয় নেই। আর স্বামীর এমনও আয় নেই যে জমি কিনে আবার বাড়ি করবেন। তাই তার পরিবার অসহায় হয়ে জীবন যাপন করছে।
মো. নুরুল ইসলাম জানান, তিনি দুইবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। বর্তমানেও তার বসতঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। নদী তার বসতভিটার কাছে চলে এসেছে। তাই বসতঘর ভেঙে একটু দূরে অন্যের জমিতে নিয়ে যাচ্ছেন।
একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আব্দুর রহিম জানান, আগে ৩/৪ কানি জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে সংসার চালাতেন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চাষাবাদ করে ভালোই আয়-রোজগার হতো তার। কিন্তু গত কয়েক বছর তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনের কারণে নিজের ফসলি জমি ও অন্যের কাছ থেকে বর্গা নেওয়া পুরো জমিই নদীর গর্ভে চলে গেছে। এখন কৃষি কাজ করতে পারেন না। আর সংসার চালাতে ছেলে ঢাকায় গিয়ে ছোটখাটো চাকরি নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. লিখন, মো. শাহিন মাহমুদ ও মো. জিহাদ জানান, গত ৩-৪ বছরে নীল কমল ইউনিয়নের ১ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর নুরুল আমিন গ্রাম তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এতে করে অনেকে তাদের বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে আবারো নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। আমরা সরকারে কাছে দাবি করছি অতি দ্রুত সিসি ব্লক দ্বারা শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন বন্ধ করা হোক। যদি অতি দ্রুত ভাঙন রোধের পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে নদী ভাঙনের কারণে আরও অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, অধিক ভাঙন কবলিত এলাকায় ৮৬০ মিটারের মধ্যে আপাতত ১১০ মিটার এলাকায় প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হচ্ছে। আরও বরাদ্দ এলে বাকি এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে সিসি ব্লক দ্বারা শক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ