অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নয়টি দেশ সফর করেছেন, যার মধ্যে কোনো পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী জুলাইয়ে ‘সরকারি সফরে’ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা সরকারপ্রধানের। তবে তার আগে যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন অধ্যাপক ইউনূস। যুক্তরাজ্য সরকার এই সফরটিকে ‘সরকারি সফর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
চার দিনের সফরে আগামী ৯ জুন লন্ডন সফরে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ে সফরটি বেশ তাৎপযপূর্ণ।
ধারণা করা হচ্ছে, বিগত সরকারের ঘনিষ্ট বেশ কিছু ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে অবস্থানের প্রেক্ষাপটে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রসঙ্গ আলোচনায় তুলবে ঢাকা। অন্যদিকে, বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশকে চারটি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল ব্রিটেন, সেটি ঢাকাকে মনে করিয়ে দিতে পারে দেশটি।
সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লন্ডন সফরকালে ড. ইউনূস যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। আগামী ১২ জুন বাকিংহাম প্রাসাদে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন ড. ইউনূস।
ওইদিন বিকেলে সেন্ট জেমস প্রাসাদে রাজা তৃতীয় চার্লসের হাত থেকে কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার কথা সরকারপ্রধানের। আগামী ১১ জুন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা। এছাড়া, তিনি যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজ আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা-লন্ডনের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ইউনূস-স্টারমারের বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, বিনিয়োগ ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো, রোহিঙ্গা সংকটের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।
তবে সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক সমর্থনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার, নির্বাচন, জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার বিচারসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে যুক্তরাজ্য সরকারকে পাশে চাইবে ঢাকা।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। যাদের অনেকে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনার তথ্য সরকারের কাছে আছে। সংশ্লিষ্টরা দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা চাইতে পারেন ড. ইউনূস।
অন্যদিকে, বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশকে চারটি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল ব্রিটেন, সেটি ঢাকাকে মনে করিয়ে দিতে পারে দেশটি। ফের আলোচনা শুরুর জন্য তাগিদ দিতে পারে ব্রিটেন।
স্মরণ করা যেতে পারে, বিগত সরকারের সময়ে ইউরোপীয় কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ব্রিটেন থেকে চারটি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব ছিল। ব্রিটেনের প্রস্তাব নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছিল। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিগত সময়ের অনেক সিদ্ধান্ত থমকে আছে।
সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারপ্রধান উপদেষ্টার সফরকে সরকারি সফর হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রধান উপদেষ্টা কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন। রাজা তৃতীয় চার্লসের হাত থেকে অ্যাওয়ার্ড নেবেন তিনি।
গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এ পুরস্কার পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। বৈঠক হলে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে।
এদিকে ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বুধবার (৪ জুন) ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। হাইকমিশনার ড. ইউনূসের সফর নিয়ে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার আগামী ১৪ জুন সকালে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। এরপর নভেম্বরে আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। গত ডিসেম্বরে ড. ইউনূস ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশর সফর করেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। এরপর মার্চে চীন সফর করেন ড. ইউনূস। এপ্রিলে থাইল্যান্ড সফর এবং সবশেষ কাতার ও ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করেন প্রধান উপদেষ্টা।
সবশেষ, গত মাসের (মে) শেষের দিকে জাপান সফর করেন সরকারপ্রধান।
বাংলা৭১নিউজ/আরকে