ঝড়-বাদলের দিন শুরু হতে আর বাকি নেই। আর এতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে উপকূলের মানুষের। কারণ প্রতি বছর এ মৌসুমে হাজারো মানুষ বাঁধ ভেঙে দুর্ভোগে পড়েন। এ অবস্থায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার কাজ চলছে।
এর মধ্যে খুলনার দাকোপে ৩১-৩২ নম্বর পোল্ডার, পাইকগাছার ১৬ নম্বর পোল্ডার, কয়রার ১৩ ও ১৪ নম্বর পোল্ডারে বেশ কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। একইভাবে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, প্রতাবনগর, পদ্মপুকুরে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর বাইরে আরও প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার বাঁধ স্বাভাবিকের থেকে উঁচু জোয়ারে ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের এ তথ্য দিলেও স্থানীয়দের দাবি প্রকৃত অবস্থা আরও নাজুক। তারা বলছেন, উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ স্থানে বাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের খবরে নতুন করে দুশ্চিন্তা ভর করে মানুষের মধ্যে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর তথ্য অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে ২৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
খুলনার কয়রা সদরের বাসিন্দা আবদুল সবুর ঢালি জানান, বাঁধের বর্তমান যে অবস্থা ঘূর্ণিঝড় এলেই তা ভেঙে যাবে। তখন ঘরবাড়ি, ফসল, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হবে। সবাইকে পথে বসতে হবে।
একই এলাকার বাসিন্দা আশরাফ ইসলাম গাজী বলেন, আইলায় যেই ক্ষতি হয়েছিল তাই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখন যদি আবার বেড়িবাঁধ ভাঙে তাহলে মরণ ছাড়া গতি হবে না।
অভিযোগ রয়েছে, উপকূলে বেড়িবাঁধ মেরামতে নামে সারা বছর ধরেই চলে দুর্নীতি লুটপাট। জরুরি মেরামতের নামে শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারি সিন্ডিকেটে লুটপাটে নাজুক অবস্থায় থেকে যায় বেড়িবাঁধ।
জানা যায়, সিডর, আইলা, আম্পানসহ নানা দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে উপকূলের প্রায় পৌনে ৯০০ কিমি বেড়িবাঁধ। এখনো প্রতি বছর ভারী বৃষ্টিতে খুলনার কয়রা পাইকগাছা দাকোপে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, সাতক্ষীরার প্রায় ২৯ কিমি ও খুলনার আরও ৬ কিমি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে জরুরিভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলছে। এর বাইরে ৮-১০ কিমি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
যেখানে পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। কোথাও বাঁধ ভাঙলে সেখানে জরুরি মেরামতে পর্যাপ্ত জিওব্যাগ মজুত রাখা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ