মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

মেহেরপুর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের সতর্কতা জারি

মেহেরপুর প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেহেরপুর জেলার সীমান্তে চলাচল ও কৃষি কাজে সতর্কতা জারি করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। একইভাবে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডও (বিজিবি) সন্ধ্যার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় চলাচল সীমিত রাখতে বলেছে। সেইসঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। এতে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

সরেজমিনে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোম্যান্স ল্যান্ডে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশেরই জমি রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়ার এপারে অনেক জমি রয়েছে ভারতীয়দের। তারা নানা জটিলতার কারণে চাষাবাদ করতে আসেন না। বাংলাদেশিদের বর্গা দেন। দীর্ঘদিন এ বর্গা প্রথা চলে এলেও কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু পাক-ভারত যুদ্ধের দামামার কারণে গুপ্ত হামলার আশঙ্কায় ভারতীয় বিএসএফ ওই জমির চাষাবাদ ছাড়া অপ্রয়োজনে সীমান্ত এলাকায় চলাচল নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মাইকিং করেছে।

সীমান্তবাসীদের মতে, সীমান্তে নোম্যান্স ল্যান্ডে ভারত অংশের কাঁটাতারের বেড়ার এপারে ১৫০ মিটারের মধ্যে ভারতীয় কৃষকের অন্তত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার বিঘা জমি রয়েছে। যার সিংহভাগই বাংলাদেশি কৃষক বর্গা নিয়ে আবাদ করেন। বিঘা প্রতি ৮-১০ হাজার টাকা লিজ বা বর্গা খরচ দিতে হয়।

এবছরও সবাই ওই জমি আবাদ করেছেন। আর কয়েকদিন পর ফসল ঘরে তুলবেন তারা। কিন্তু সীমান্তে সতর্কতা সরূপ বিএসএফ-বিজিবি অপ্রয়োজনীয় চলাচল ছাড়াও বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মাইকিং করেছে।

সীমান্তবাসী আরও জানান, বাংলাদেশ সীমান্তের মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী মুজিবনগর, গাংনী ও মেহেরপুর সদর উপজেলা। সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৯ কিলোমিটার। এই সীমান্তটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সংযুক্ত। এর সঙ্গে সংযুক্ত এলাকা হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নবীননগর, শিকারপুর, তাজপুর, ভাদুপাড়া, নবচন্দ্রপুর, লালবাজার, করিমপুরসহ অনেকগুলো গ্রাম।

সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে দুই দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে ৭৪টি সীমান্ত গেট রয়েছে। যেগুলো দিয়ে ভারতীয় কৃষক কৃষিকাজ করতে কাঁটাতারের এপারে নিজ জমিতে আসেন। তারা এখন আসছেন বিএসএফের প্রহরায়।

 

সবচেয়ে বেশি জমি রয়েছে মেহেরপুরের ইচাখালী সীমান্তে। অন্তত ২৫-৩০ জন চাষির প্রায় ৭৫ বিঘা জমি রয়েছে সেখানে। এসব জমির মালিকদের বেশিরভাগই গোভিপুরের। এই জমিগুলোর মালিকানা নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হলেও এখনও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। এসব জমি দেশভাগের সময় ভারতের অংশে চলে যায়। তবে বাংলাদেশি কৃষকরা সেগুলো বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের আসাদুল হক জানান, দেশভাগের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সেতু বন্ধন সৃষ্টি করেছে। নোম্যান্স ল্যান্ডে উভয় দেশের কৃষক কাজ করে। এখনও সকলেই ফসল কেটে ঘরে তুলছেন। কোনো বাধা নেই। তবে পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে উভয় দেশের চাষিদেরকে চলাচলের ওপর সতর্কতা জারি করেছে। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ছাড়াও স্থানীয়ভাবে সন্ধ্যার পর থেকে চলাচলে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। একই কথা জানান ইছাখালি গ্রামের আরশেদ হোসেন।

মেহেরপুর গাংনীর সীমান্তবর্তী তেতুঁলবাড়িয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব জানান, পাক-ভারত যুদ্ধের প্রভাব এখানে নেই। আগের মতোই দু’দেশের চাষিরা চাষাবাদ করছেন। তবে সতর্কতা সরূপ উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত চলাচল সম্পূর্ণ সীমিত করা হয়েছে।

৪৭ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার মাহাবুব মুর্শেদ জানান, সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। বিকেল থেকে সবারই চলাচল সীমিত। এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। দু’দেশের যৌথ টহলও চলমান। তবে পাক-ভারত যুদ্ধের প্রভাব এ সীমান্তে নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com