সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

১৪ কিলোমিটার ভাঙা সড়কে গ্রীষ্মে হেলেদুলে চলে গাড়ি, বর্ষায় নৌকা

নাটোর প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

১৪ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও সড়ক ভেঙে ধসে গেছে, কোথাও ঢালাই ভেঙে আস্ত রড বেরিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, প্রায় ১৬ বছর আগে চলন বিলের বুক চিরে নির্মিত এই সড়ক বর্ষায় রূপ নেয় বিশাল জলাশয়ে, তখন সড়কেই চলে নৌকা। আবার শুষ্ক মৌসুমে সেই ভাঙা সড়কেই ছুটে যানবাহন। এমন পরিস্থিতিতে শত আশা নিয়ে গড়ে এই সড়ক নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে অন্তত তিন উপজেলার লক্ষধিক মানুষ।

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও গুরুদাসপুর-তাড়াশ মৈত্রী ১৪ কিলোমিটারের ডুবসড়ক ঘিরে পরিস্থিতি এমনটাই নাজুক। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রীবাহী ছোট ছোট যানবাহন। হেঁটে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা। সবমিলিয়ে বলা চলে, বছরজুড়ে ১৪ কিলোমিটার সড়কজুড়ে পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়, গ্রামবাসী এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস (এলজিইডি) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ কিলোমিটারের এই সড়কের অবস্থান দক্ষিণ চলনবিলের নিম্নাঞ্চল বিলশা বাজার থেকে রুহাই, কুন্দইল, মাকর্সন হয়ে তাড়াশ উপজেলা পর্যন্ত। এই সড়কটি চলনবিলের বিছিন্ন তিনটি উপজেলা গুরুদাসপুর, সিংড়া এবং তাড়াশকে সংযুক্ত করেছে।

প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে যাত্রীবাহী ছোট ছোট অসংখ্য ভ্যান, ভটভটি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। রুহাই, কুন্দইল, মাকর্সন, বিলশা, আয়েস, বিয়েশ, কাউয়া টিকরিসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ এই সড়কটির ওপরে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। 

একইভাবে দক্ষিণ চলনবিলের ধান, ভুট্টা, গমসহ বছরজুড়ে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে এবং বাজারজাতের ক্ষেত্রে সড়কটি ব্যবহার করেন এসব এলাকার কৃষকরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস (এলজিইডি) জানিয়েছে, কৃষকের চাষাবাদ এবং তিন উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য করতে বিলের বুক চিরে ২০০৯ সালে ১৪ কিলোমিটার ডুবসড়ক নির্মাণ করা হয়।

সড়কটির গুরুদাসপুর উপজেলা অংশে ৭ কিলোমিটার ও তাড়াশ উপজেলা অংশে রয়েছে ৭ কিলোমিটার। আর তাড়াশের কুন্দইল থেকে অন্য একটি সড়ক বয়ে গেছে সিংড়া উপজেলা অভিমুখে। বর্ষায় সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় চলনবিলের সঙ্গে মিলিয়ে যাওয়ার কারণে সড়কে দিয়ে চলাচল করে নৌকা। তবে শুষ্ক মৌসুমে এই সড়কে চলাচল বাড়ে উল্লেখযোগ্য হারে। 

বর্ষায় সড়কজুড়ে পানির থাকার কারণে নির্মাণের ১৬ বছরের মাথায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কার বা পুননির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়ায় ডুবসড়কটি ঘিরে এ পরিস্তিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক জালাল উদ্দিন ও আকলিমা আখতার বলেন, ১৪ কিলোমিটারের এই সড়ক ঘেঁষে দুটি সাইক্লোন শেল্টার কাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি বাজার, কয়েকটি কবরস্থান, ঈদগাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

তাছাড়া চলনবিলের ফসলের ক্ষেত চিরে বয়ে যাওয়া দৃষ্টিনন্দন এই সড়কে আসে পর্যটকও। সবাইকে ভাঙ্গাচোরা এই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের পাশিপাশি রয়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কাও। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি তাদের।

আব্দুস সামাদ, আলী হোসেন মন্ডল, গফুর সরকারসহে এই অঞ্চলের অন্তত ১৫ জন কৃষক জানিয়েছেন, সড়কটি নির্মাণের পর তারা সহজেই চাষাবাদ এবং উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারতেন। সড়কটি জরাজীর্ণ হওয়ায় উৎপাদিত ফসল এবং পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ চাষাবাদের জন্য সার-কীটনাশক এবং ফসল পরিবহনে বর্তমানে যানবাহনের চিন্তা বাদ দিয়ে গরুমহিষের গাড়ির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনে ব্যয় ও দুর্ভোগ দুটোই বাড়ছে।

খুবজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দোলন বলেন, সড়কটির কারণে বিলশা, খুবজিপুর বাজারের গুরুত্ব বেড়েছে অনেক। বিলপাড়ের মানুষ এই সড়ক দিয়েই চলাচল করেন। সড়কটির বেহাল পরিস্তিতির কথা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় এলজিইডির প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। উনারা সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা প্রকৌশলী মিলন বলেন, সড়কটি মেরামতের প্রাক্কলন (সড়ক সংস্কারের আগাম খরচের হিসাব) তৈরি করে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। সড়কটি এই অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুমোদন হলেই সংস্কার কাজ শুরু হবে।

বাংলা৭১নিউজ/এবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2018-2025
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com